দীঘিনালায় চিকিৎসকদের চাঁদায় চিকিৎসা

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক-কর্মচারীদের মাসিক চাঁদায় কমপ্লেক্সে আসা গরিব, শারীরিক অক্ষম ও বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে রোগীদের পুনর্বাসনে গঠন করা হয়েছে একটি তহবিল। ২০১২ সালের ৬ জুন থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই তহবিল থেকে ১৮৬ জন রোগীকে আর্থিক সাহায্য ও ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ৬ জুন সুজাতা চাকমা নামে দুস্থ এক নারীর চিকিৎসায় সাহায্য করতে গিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন চিকিৎসা কর্মকর্তা পলাশ নাগ ডায়াবেটিক, অক্ষম ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে একটি তহবিল গঠন করেন। এই তহবিলের ৪০ সদস্য সামর্থ্য অনুয়ায়ী মাসিক চাঁদা দেন।

চিকিৎসকেরা জানান, ২০১২ সালে থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছর ধরে উপজেলার কামাকুছড়া এলাকার সুজাতা চাকমা নামের এক নারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁকে সহায়তা করার মতো কেউ ছিল না। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ কেনারও সামর্থ্য ছিল না সুজাতা চাকমার। প্রথম দিকে চিকিৎসক পলাশ নাগ নিজের টাকায় ওষুধ কিনে দেন। এরপর ভাবলেন, সুজাতার মতো অসহায় রোগীদের সাহায্যে স্থায়ী একটা কিছু করবেন। এরপর একদিন সহকর্মীদের নিয়ে সভা করে নিজেরা মাসিক চাঁদা দিয়ে একটি তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সবার সম্মতিতে ২০১২ সালের ৬ জুন প্রতিষ্ঠা করা হলো ‘ডায়াবেটিক ডিজঅ্যাবল অ্যান্ড জেরিয়াট্রিক রিহ্যাব ফান্ড’ অর্থাৎ ডায়াবেটিক, অক্ষম ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পুনর্বাসন তহবিল। তখন থেকে সংগঠনের পথচলা শুরু। এই তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ১৮৬ জনকে সহায়তা করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দন্ত বিভাগের চিকিৎসক নিউটন চাকমা বলেন, ‘মাস শেষে যখন বেতন পাই, তখন সবার আগে তহবিলের চাঁদা পরিশোধ করার চেষ্টা করি। এ টাকা থেকে মানুষকে চিকিৎসায় সাহায্য করা হয়।’

উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা রাশেদুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে আমি তহবিলের দায়িত্ব পালন করছি। রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে আমরা নগদ টাকা দিই কিংবা ফার্মেসি থেকে নিজেরা গিয়ে ওষুধ কিনে দিই। আমাদের কয়েকজন সদস্য এখানে কর্মরত নেই। কিন্তু বিকাশের মাধ্যমে মাস শেষে তহবিলের চাঁদা ঠিকই পাঠিয়ে দেন।’

এ প্রসঙ্গে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক পলাশ নাগ বলেন, ‘ডায়াবেটিক ডিজঅ্যাবল অ্যান্ড জেরিয়াট্রিক রিহ্যাব ফান্ড’ গঠনের মূল অনুপ্রেরণা ছিল সুজাতা চাকমা। তাঁকে আমরা দীর্ঘ সাত বছর ধরে চিকিৎসায় সাহায্য দিয়েছি। দুঃখের বিষয়, চার মাস আগে তিনি মারা গেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এ সংগঠনের সদস্যরা সবাই খুবই আন্তরিক। আমাদের কাছে সবাই রোগী। জাত, ধর্ম, গোত্রের ভেদাভেদ নেই। আমরা রোগীর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সাহায্য করে থাকি। হয়তো আমাদের সাহায্যের পরিমাণ খুবই নগণ্য। কিন্তু আমাদের সব সদস্যের মধ্যে মানুষের জন্য কিছু করার মানসিকতা আছে। আমরা এখনো সুজাতা চাকমাকে স্মরণ করি।’