স্বর্ণপদক গলায় ঝোলাতে দেড় যুগ অপেক্ষা

পাস করার ২০ বছর পর স্বর্ণপদক পেতে যাচ্ছেন এই তিনজন। বাঁ দিক থেকে মোহাম্মদ জহিরুল হক, মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান ও নূর উদ্দিন আহমদ। ছবি: প্রথম আলো
পাস করার ২০ বছর পর স্বর্ণপদক পেতে যাচ্ছেন এই তিনজন। বাঁ দিক থেকে মোহাম্মদ জহিরুল হক, মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান ও নূর উদ্দিন আহমদ। ছবি: প্রথম আলো

তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। স্নাতকে প্রত্যেকের ফলই ঈর্ষণীয়। এত দিনে তাঁরা নিজ নিজ বিভাগের অধ্যাপক। দেড় যুগেরও বেশি সময় আগের সেই কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য তাঁরা চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পাচ্ছেন আজ। পাস করার ১৬ বছর পর একই পদক পাচ্ছেন আরও দুই কৃতী শিক্ষার্থী।

আজ বুধবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে কৃতী শিক্ষার্থীদের এই পদক দেওয়া হচ্ছে। এবার স্বর্ণপদক পাচ্ছেন মোট ২০ জন। অন্যদেরও এ পদক গলায় ঝোলানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে অর্ধ থেকে দেড় যুগ পর্যন্ত।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাস করার পর ওই পাঁচজন সমাবর্তন পান ২০০৭ সালে। সেবার স্বর্ণপদকের তালিকায় তাঁদের নামও ছিল। কিন্তু সমাবর্তনের আগের দিন কর্তৃপক্ষের ভুলে তাঁদের নাম বাদ যায়। এত দিন পর সেই ভুল সংশোধন করে তাঁদের গলায় পদক পরিয়ে দিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ওই পাঁচজনই নিজেদের বিভাগে প্রথম স্থান অধিকারী ও নিজেদের স্নাতক পাস করার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ফল অর্জনকারী। তাঁরা হলেন ১৯৯৮ সালে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স (সিইপি) বিভাগ থেকে স্নাতক মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান, ২০০০ সালে রাজনীতি অধ্যয়ন বিভাগ থেকে স্নাতক মোহাম্মদ জহিরুল হক, ২০০১ সালে রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক নূর উদ্দিন আহমদ, ১৯৯৭-১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে স্নাতক ইফতেখার ইবনে বাসিত ও গণিত বিভাগ থেকে স্নাতক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।

মস্তাবুর ২০০৩ সালে তিনি জাপান সরকারের মনবুশো বৃত্তি নিয়ে এমএসসি (প্রকৌশল) করেন। পরে ইতালি সরকারের বৃত্তি নিয়ে ২০১১ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগের অধ্যাপক। সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের নির্বাচিত সদস্যও।

জহিরুল হক কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে স্নাতকোত্তর করেন। পরে একই বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে পিএইচডি ডিগ্রিও নিয়েছেন। এখন তিনি নিজের বিভাগের অধ্যাপক।

নূর উদ্দিন কানাডা থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। ২০১৫ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং স্কলার ছিলেন। বর্তমানে নিজের বিভাগের অধ্যাপক।

ইফতেখার এবং মামুনও নিজ নিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ইফতেখার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও মামুন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলে এত দিন স্বর্ণপদক না পাওয়া ইফতেখার ইবনে বাসিত সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ‘হাসিব নাকি কাঁদিব? এ কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব’—শীর্ষক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘২০০৭ সালে এ পদক দেওয়া হলে আম্মা-আব্বা একসঙ্গে যেতে পারতেন। এখন হয়তো শুধু আম্মাই যাবেন, গর্বের সঙ্গে। আব্বা, এই স্বর্ণপদকটা তোমার জন্যও।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন হয়। নিয়ম অনুসারে, প্রতিবছর সমাবর্তন হওয়ার কথা থাকলেও ২০০৭ সালে হয় দ্বিতীয় সমাবর্তন। সেবার ওই পাঁচজনের স্বর্ণপদক পাওয়ার তালিকায় নাম ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক করতে চার বছর লাগত। অন্যান্য বিষয়ে লাগত তিন বছর। এই দুই ধরনের স্নাতকে সর্বোচ্চ ফল অর্জনকারীদের তালিকা আলাদা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তালিকা প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা তখন এতে গুলিয়ে ফেলেন। এ কারণে ওই পাঁচজনকে সেবার স্বর্ণপদক দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তাঁরা। পরে ভুল বুঝতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তত দিনে সমাবর্তন শেষ। ভুল সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটি পরের একাডেমিক কাউন্সিলে ওই পাঁচজনকে স্বর্ণপদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়।

এবার স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, আগের কমিটি ভুল করে তালিকা থেকে ওই পাঁচজনকে বাদ দিয়েছিল। তাই তাঁদের এত দিন অপেক্ষা করতে হলো।

আজ চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক নেবেন এসব কৃতী শিক্ষার্থী। ছবি: মিসবাহ্ উদ্দিন
আজ চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক নেবেন এসব কৃতী শিক্ষার্থী। ছবি: মিসবাহ্ উদ্দিন


অন্যদের অপেক্ষা অর্ধযুগ থেকে দেড় যুগ
স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য আরও ১৫ জনকে এবার স্বর্ণপদক দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে স্নাতকোত্তরে কৃতিত্বের জন্য স্বর্ণপদক পাচ্ছেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দ মোহাম্মদ খালেদ রহমানকে। তিনি এখন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

স্নাতকোত্তরের ফলে স্বর্ণপদক পাওয়া আরও রয়েছেন রসায়ন বিভাগের ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষের মো. সাইফুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষের সুবর্ণা সরকার, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের মো. আবদুল হালিম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষের এনক সমাদ্দার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষের মো. তফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের মো. জাবেদ ফয়সাল, একই বিভাগের ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের মো. হজরত আলী, অর্থনীতি বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের অমিত রায়।

স্নাতকের ফলে স্বর্ণপদক পাচ্ছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০১-২০০২ শিক্ষাবর্ষের মো. রুহুল আমিন, একই বিভাগের ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষের সাদিয়া সুলতানা, ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষের মো. আক্তার হোসেন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের সিমরিকা থাপা, অর্থনীতি বিভাগের ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষের অমিত রায় এবং গণিত বিভাগের ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের বিলাল উদ্দিন।