ছাত্রলীগের নেতা হতে আবার কলেজে ভর্তি হলেন তাঁরা

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সরকারি পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিটির সভাপতি ইমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন অন্য কলেজের স্নাতকোত্তর ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেতে তাঁরা দুজন আবার সরকারি পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অন্য কলেজের ছাত্রদের নেতা বানানোয় ক্ষুব্ধ স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রলীগ ও সরকারি পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজ সূত্র জানায়, সাত বছর পর সরকারি পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ১৫ ডিসেম্বর। গত ২৮ ডিসেম্বর ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অনুমোদিত কমিটির সভাপতি ইমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন। তাঁরা দুজন পুরোনো কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ইমরান হোসেন ২০১৩ সালে সরকারি পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি বর্তমানে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র। আর সানোয়ার হোসেন ওই কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি গোসাইরহাট সরকারি শামছুর রহমান কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির নিয়মিত ছাত্র। তাঁরা দুজনই পুনরায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সরকারি পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা বলেন, তাঁদের দুজনকে কমিটিতে শীর্ষ পদ দেওয়া হবে—এটা আগেই চূড়ান্ত ছিল। এ কারণে সম্মেলনের আগে অনলাইনে তাঁরা ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তির আবেদন করেন। এভাবে অন্য কলেজের ছাত্রদের কমিটির শীর্ষ পদ দেওয়ায় ছাত্রছাত্রী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। এটা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

সরকারি পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘শরীয়তপুর সরকারি কলেজে মাস্টার্স পড়ছি, পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হওয়ার জন্য এইচএসসি সমমানের ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা কোর্সে ভর্তি হয়েছি। স্থানীয় সাংসদ ও ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আগ্রহে নতুন কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।’

সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন বলেন, আগের কমিটি সাত বছর ছিল। তাই নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। তিনি রাজনীতি করার জন্য এবং ছাত্রলীগের কমিটির শীর্ষ পদ পাওয়ার জন্য কলেজে ভর্তি হয়েছেন বলে তিনি জানালেন।

জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর বলেন, ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কলেজ কমিটি করতে হলে সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষার্থী হতে হবে। কমিটি অনুমোদনের জন্য ডামুড্যা থেকে সুপারিশসহ আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারা ওই কলেজের ছাত্র কি না, তা পরীক্ষা করা হয়নি। অভিযোগ উঠলে পরীক্ষা করে দেখা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সরকারি পূর্ব মাদারীপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জহিরুল্লাহ বলেন, ‘কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা কোর্সে অনলাইনে ভর্তি হয়েছে। কেন তারা আবার এখানে ভর্তি হয়েছে, তা বলতে পারছি না।’