কালের সাক্ষী চাঁপালিশ
রাঙামাটি শহরের রিজার্ভমুখ এলাকায় কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে জেলা প্রশাসকের বাসভবন। ওই বাসভবন–সংলগ্ন পার্কটি ডিসি বাংলো পার্ক নামে পরিচিত। সেখানেই ঢোকার মুখে চোখে পড়ে বিশাল আকারের একটি চঁাপালিশগাছ। তিন শ বছরেরও বেশি বয়সের এই গাছটি ইতিহাসের নীরব সাক্ষী। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, বিশেষ করে শিশু-কিশোর এবং পর্যটকেরা ডিসি বাংলো পার্কে বেড়াতে এসে গাছটির চারদিকে ভিড় জমান। অনেকে ছবি আর সেলফিও তোলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শহরের অন্যতম প্রাচীন বৃক্ষ এটি। গাছের গায়ে সাঁটানো সাইনবোর্ডে যে তথ্য উল্লেখ আছে সে অনুযায়ী, গাছটির বয়স ৩১৪ বছর। এটি ১০৪ ফুট লম্বা ও এর কাণ্ডের পরিধি প্রায় ২৫ ফুট। গাছটি নিয়ে পার্কে আসা দর্শনার্থীদের কৌতূহলের যেন শেষ নেই।
বন বিভাগ জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে একসময় অসংখ্য চঁাপালিশগাছ ছিল। বন ধ্বংস হওয়ায় দেশি এই গাছ এখন এই হারিয়ে যেতে বসেছে। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। কাঁঠালের আত্মীয় চাঁপালিশগাছের ফল বানরসহ অসংখ্য পাখির প্রিয় খাদ্য। এটিও দেখতে অনেকটা কাঁঠালের মতো। তবে আকারে অনেক ছোট। স্বাদে টক-মিষ্টি এই ফলের কদর আছে স্থানীয় লোকজনের কাছেও। বর্তমানে জেলা প্রশাসন এই চাঁপালিশগাছটি পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করছে।
রাঙামাটি শহরের দর্শনার্থী মো. আবদুল সালাম ও অমিত কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রায় সময় ডিসি বাংলো পার্কে ঘুরতে যাই। সেখানে অতি পুরোনো এক গাছ রয়েছে। সাইনবোর্ডে গাছের বয়স দেখে অনেক দর্শনার্থীর কৌতূহল জাগে। অনেককে গাছের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়।’
রাঙামাটির শিক্ষাবিদ ও গবেষক মংসানু চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৫৮ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে যখন সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই, তখন ডিসি বাংলোতে প্রথম চাঁপালিশগাছটি দেখি। তখনই এত বড় ছিল। তবে তখন ফল দিত। এখন আর গাছটিতে ফল ধরে না। তখন বয়োজ্যেষ্ঠরাও এই গাছটি নিয়ে নানা আলোচনা করতেন।
গবেষক মংসানু আরও জানান, ‘১৮৬০ সালের ২০ জুন রাঙামাটি জেলা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ নয় বছর চন্দ্রঘোনা মোহকুমা থেকে সব কার্যক্রম পরিচালনার পর ১৮৬৯ সালে রাঙামাটি শহরে কার্যক্রম শুরু করা হয়। সেই সময় চাঁপালিশগাছটির আকার, ধরন একই ছিল বলে বৃদ্ধেরা বলে গেছেন।
দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তোফিকুল ইসলাম বলেন, ডিসি বাংলো ফটকে বিশাল আকারে চাঁপালিশগাছটি অনেক পুরোনো। শুনেছি এই গাছটি বন বিভাগ থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বন বিভাগ গাছটির বয়স নির্ণয় করেছে। এটি এখন জেলার সবচেয়ে প্রাচীন গাছগুলোর একটি। শহরের ইতিহাসের সঙ্গেও গাছটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।