বাগমারায় মেসেঞ্জার গ্রুপে কৃষি পরামর্শ

কীটনাশক প্রয়োগে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার আগে পোকায় আক্রান্ত সরিষাখেতের ছবি তুলছেন এক  কৃষি কর্মকর্তা। সম্প্রতি বাগমারার হামিরকুৎসা গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
কীটনাশক প্রয়োগে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার আগে পোকায় আক্রান্ত সরিষাখেতের ছবি তুলছেন এক কৃষি কর্মকর্তা। সম্প্রতি বাগমারার হামিরকুৎসা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা গ্রামের ধানখেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কিন্তু কী পোকা, তা নিশ্চিত নন কৃষকেরা। নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আক্রান্ত ধানগাছের ছবি তুলে পাঠালেন একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে। কিছুক্ষণের মধ্যে পোকার আক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিকার ও করণীয় লিখে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ ওই গ্রুপের অন্য সদস্যরা। পরে ধানখেতে দাঁড়িয়েই সে তথ্য জানানো হলো কৃষকদের।

কৃষি কর্মকর্তার দপ্তরে যাতায়াতের ঝামেলা কমাতে এ সুবিধা চালু করেছে বাগমারা উপজেলা কৃষি অফিস। ‘উপজেলা কৃষি অফিস, বাগমারা’ নামের একটি অ্যাকাউন্টে বার্তা পাঠিয়ে গ্রামের মাঠে বসেই ফসলের নানা সমস্যা ও কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে পরামর্শ পাচ্ছেন কৃষকেরা। আবার দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ দেওয়াসহ ফসলের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য খোলা হয়েছে মেসেঞ্জার গ্রুপ। প্রায় এক বছর ধরে এভাবেই পরিচালিত হচ্ছে কৃষি অফিসের সেবা কার্যক্রম।

উপজেলার খাজাপাড়া গ্রামের কামাল হোসেন, গণিপুরের এরশাদ আলী, রামপুরের জয়নাল আবেদিনসহ ১২ থেকে ১৩ জন কৃষক বলেন, আগে চাষাবাদসংক্রান্ত কোনো সমস্যায় পড়লে কৃষি অফিস থেকে সমাধান পাওয়া দুরূহ ছিল। তবে এখন কৃষি অফিসের লোকজন ছুটে এসে তাঁদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়াসহ পরামর্শ দিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘উপজেলা কৃষি অফিস, বাগমারা’ নামের ওই অ্যাকাউন্টে কৃষি কর্মকর্তারাসহ যুক্ত আছেন প্রায় তিন হাজার কৃষক। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যোগাযোগ শুরু হয়। এই সময়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ‘উপজেলা কৃষি অফিস, বাগমারা’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট চালু করেন। এই অ্যাকাউন্টে আবহাওয়ার এক সপ্তাহের বার্তা প্রচার ও কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন বার্তা প্রচার করা হয়। পরে একটি গ্রুপ করে দপ্তরের ৬০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে যুক্ত করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও আছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ আছে একটি করে ট্যাবলেট কম্পিউটার। প্রতি মাসে এ কর্মকর্তাদের দেওয়া হয় ৩ গিগাবাইট (জিবি) ইন্টারনেট। জাতীয় কৃষিপ্রযুক্তি প্রকল্প (এনএটিপি) এবং আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এসব সুবিধা দেওয়া হয়। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সরাসরি তাঁদের কৃষি বিষয়ে সমস্যার কথা জানিয়ে দ্রুত পরামর্শ পেতে পারেন। আবার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমেও দ্রুত পরামর্শ নিতে পারেন তাঁরা। দপ্তরের সবাই এই গ্রুপের সদস্য হওয়ার কারণে সহজে তাঁদের কাছে জরুরি কোনো বার্তা পৌঁছানো যায়।

উপজেলার বড়বিহানালী ইউনিয়ন ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল বারী জানান, এই গ্রুপের মাধ্যমে দ্রুত কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা শনাক্ত করা ও সমাধান দেওয়া যায়। এ ছাড়া মাঠে কে কোথায় কী কাজ করলেন, তা এই গ্রুপে জানানো হয়। এতে দাপ্তরিক কাজেও স্বচ্ছতা বেড়েছে।