লক্ষ্মীপুরে এক বছরে ৪১ ধর্ষণ

লক্ষ্মীপুর জেলায় গত এক বছরে ৪১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে পাঁচটি ছিল গণধর্ষণের ঘটনা। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অক্টোবর মাসে, নয়টি। এসব ধর্ষণের শিকার অধিকাংশই শিশু ও কিশোরী। 

২০১৮ সালে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২০টি। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা আরও বেশি হবে। কারণ সব ঘটনায় মামলা হয় না। 

গত বছর বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায়। এখানে মামলার সংখ্যা আটটি। আর চন্দ্রগঞ্জ থানায় পাঁচটি, রায়পুর, কমলনগর, রামগঞ্জ ও রামগতি উপজেলায় সাতটি করে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এসব ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

বিগত বছর সারা দেশে ১ হাজার ৭০৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ২৩৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৭৭ জনকে। ধর্ষণের ঘটনায় আত্মহত্যা করে ১৯ জন। বছরটিতে ২৪৫ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। আর বছরটিতে ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় ৪ হাজার ৬২২ জন নারী ও শিশু। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গত বছরের নির্যাতনের এ তথ্য দিয়েছে। গত মঙ্গলবার পরিষদের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

>

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা আরও বেশি হবে। কারণ, সব ঘটনায় মামলা হয় না।

লক্ষ্মীপুরে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত ও ধর্ষণের শিকার নারীদের আইনি সহায়তা দিয়ে আসছে পৌর মহিলা সমাজ উন্নয়ন সমিতি। এ সংস্থার সভানেত্রী মমতাজ বেগম জানান, প্রতিদিন নির্যাতিত নারীরা সহযোগিতার জন্য তাঁদের সমিতিতে আসেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, লক্ষ্মীপুরে শিশু ও কিশোরীরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কারণ তারা অরক্ষিত।

৪১টি ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল পাঁচটি গণধর্ষণ। ২৯ অক্টোবর রামগতিতে এক গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হন। উপজেলার চর নেয়ামত এলাকার স্লুইসগেটের পাশে গণধর্ষণ করা হয় তাঁকে। ওই গৃহবধূ চট্টগ্রাম থেকে স্বামীর খোঁজে রামগতিতে এলে বখাটেরা তাঁকে ধর্ষণ করে। ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে রামগতি থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। 

 গত ২১ অক্টোবর রাতে রামগঞ্জ উপজেলায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে বখাটেরা। উপজেলার ভাদুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাদুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ২২ অক্টোবর রায়পুর উপজেলায় চতুর্থ শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে দক্ষিণ চরবংশীর চরকাছিয়া গ্রামে মাসুদ গোলদার (২৬) নামে এক ব্যক্তি ওই ছাত্রীর মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়। ঘটনার পরদিন মাসুদ গোলদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ধর্ষণের শিকার দুজন নারী এ প্রতিবেদককে জানান, ধর্ষণের শিকার হয়ে তাঁরা মামলা করেন। কিন্তু সমাজ তাঁদের ভালো চোখে দেখছে না। আইনি লড়াই চালাতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রিয়াজুল কবির বলেন, ধর্ষণের সব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মানবাধিকার ফোরামের সমন্বয়কারী নুর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের সব ঘটনায় মামলা হয় না। তাই অনেক ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে না। আর জেলায় ৪১টি ধর্ষণের চিত্র উদ্বেগজনক। ধর্ষণ বন্ধে সচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি