উত্তরে এই মেঘ, এই রোদ্দুর

খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা। আজ বৃহস্পতিবার, নীলফামারী সদর উপজেলা, পাটকমুরি গ্রাম। ছবি: মীর মাহমুদুল হাসান
খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা। আজ বৃহস্পতিবার, নীলফামারী সদর উপজেলা, পাটকমুরি গ্রাম। ছবি: মীর মাহমুদুল হাসান

উত্তরাঞ্চলের আকাশে আজ এই মেঘ, এই রোদ্দুর। যেন মেঘ-কুয়াশা ও সূর্যের লুকোচুরি খেলা। খেলায় অবশ্য বেশির ভাগ সময় জিতছে মেঘ ও কুয়াশা। কখনো মেঘ-কুয়াশাকে পাশ কাটিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। তবে তাতে শীতের প্রকোপ খুব একটা কমছে না।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রংপুরের আকাশ কুয়াশা ও মেঘে আচ্ছন্ন ছিল। সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস। তার ওপর গতকাল বুধবার রাতে নগরে বৃষ্টি হয়েছে। এতে রাস্তাঘাটের দুপাশে পানি জমেছে। স্যাঁতসেঁতে ভাব। তবে এর মধ্যেও শীতার্ত মানুষ ঘরের মধ্যে বন্দী নেই। তাঁরা বাইরে বের হয়ে ছুটে চলেছেন কাজে।

বেলা ১১টার দিকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের শরীরে শীতের গরম কাপড়। বেশির ভাগ মানুষের মাথা ও কান ঢাকা। কেউ গায়ে জড়িয়েছেন চাদর, যাতে ঠান্ডা বাতাস শরীরে না লাগে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুরে আজ সকাল ৯টার দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিনের তুলনায় তাপমাত্রা একটু বাড়লেও রোদ না থাকা এবং ঠান্ডা বাতাসের কারণে শীতের অনুভূতি বেশি।

নগরের কয়েকজন জানালেন শীত পড়েছে। তবে ঘরে বসে থাকার উপায় নেই। কাল শুক্রবার দোকানপাট বন্ধ থাকবে। অফিস-আদালতে সরকারি ছুটি। অনেক টুকিটাকি কাজ সেরে ফেলতে হবে। তাই শীত উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়েছেন বাইরে।

নীলফামারীতে বুধবার দিবাগত রাতে বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল ১০টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও থেমে থেমে ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরে। এ কারণে শীত কমছে না। আজ এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত উপেক্ষা করে মানুষেরা খেতখামারে কাজ করছেন। বয়স্ক ব্যক্তিরা কেউ আগুন পোহাচ্ছেন। কেউ খড়ের গাদায় বসে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। পশুর গায়ে জড়ানো হয়েছে চট।

সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের দিনমজুর ইনছান আলী (৬০) বলেন, ‘ঠান্ডাত কাম কাইজ করা যায়ছে না। তার ওপর বৃষ্টিটা আরও কষ্ট বাড়াইছে। এখান কম্বলের জইন্যে কত জাগাত গেনু কাও দেয় না। আইতত হির হির করি ঠান্ডা ঢুকেছে ঘরত।’

জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এ হায়াত বলেন, ‘নীলফামারীতে শীতার্ত মানুষের মাঝে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ৪৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরও ১৩ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কম্বল কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা এবং শিশুদের গরম পোশাক কেনার জন্য ২ লাখ টাকা রয়েছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের আবহাওয়া সহকারী মো. লোকমান হাকিম জানান, বুধবার এখানে ২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবারের পর তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে।

গাইবান্ধায় আজ সকাল ১০টার দিকে সূর্য উঁকি দিলেও কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘে ঢেকে যায়। এর আগে ভোর থেকে ভারী কুয়াশা ও বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না।

কয়েক দিন ধরে এ জেলায় দুপুরে একটু কম শীত অনুভূত হলেও সকাল-সন্ধ্যা প্রচণ্ড শীত পড়ছে। সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে। এতে গরিব লোকজন কষ্ট পাচ্ছে বেশি। বিশেষ করে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে মানুষেরা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।