কেউ বলছেন দলীয় সিদ্ধান্তের কথা, কেউ বলছেন 'চাপ'

নির্বাচন কমিশন ভবন
নির্বাচন কমিশন ভবন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৫ জন কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে একজনকে। তিনি বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত আলী। কিন্তু তাঁকে যোগ্য মনে করেন না বাকি ১৪ জন।

সেই ১৪ জন প্রার্থিতা জমা না দিয়ে একজনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করলেন। ঠিক করলেন, তাঁদের মধ্য থেকে সাজ্জাদ হোসেন চিশতীকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাবেন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে তিনিও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেন।

সাজ্জাদ হোসেনের অভিযোগ, দলের পক্ষ থেকে যাঁকে কাউন্সিলর হিসেবে সমর্থন দেওয়া হয়েছে, তিনি বয়সে, রাজনৈতিক দিক থেকে এবং এলাকায় জনপ্রিয়তার দিক থেকেও যোগ্য নন। বছরের পর বছর ধরে ওই পরিবারের বাইরে কাউকে নির্বাচন করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণে এই ওয়ার্ডের বাকি ১৪ জন মিলে দলীয় প্রধানের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলাম, যাতে অন্য কাউকে কাউন্সিলর করা হয়। কিন্তু তা হয়নি।’ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘দলের সমর্থন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছি। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচন করতে পারছি না। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়।’

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল আজ। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা নেওয়া হয়।

আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, উত্তরের ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের ৩৬২ জন কাউন্সিল প্রার্থীর মধ্যে ১১১ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। ফলে সাধারণ ওয়ার্ডে ২৫১ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর সংরক্ষিত ১৮টি ওয়ার্ডের ৮৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে রইলো ৭৭ জন প্রার্থী। তবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ছয় প্রার্থীর কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। এ নিয়ে উত্তর সিটির ৪৫৭ প্রার্থীর মধ্যে মোট ১২৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। বৈধ রইল ৩৩৪ জন প্রার্থী।

শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ৩৩৪ জন মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৭৩ প্রকারের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানান উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম।

ডিএনসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বলেন, প্রার্থীরা নিজ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন। তবে কেউ চাইলে দলীয় সমর্থনের বাইরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর প্রার্থিতা বৈধ। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন একটি উৎসব। আমরা চাই না এর মধ্যে কেউ সংঘর্ষে জড়াক। আমি সবাইকে আচরণবিধি মেনে নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে আহ্বান জানাই।’ কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তা মোকাবিলায় তাঁরা শতভাগ প্রস্তুত বলে তিনি জানান। ইসির ম্যাজিস্ট্রেট আছে, তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনে উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনেক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে দেখা যায়। ডিএনসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ইকবাল হোসেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে এসে বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে ওয়ার্ড চালিয়েছি। দলের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। দল তা মূল্যায়ন করেনি। এখন দল ও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়ে সসম্মানে চলে যাচ্ছি।’

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থনপ্রত্যাশী ছিলেন মো. শাকিল মোল্লা। কিন্তু দল তাঁকে সমর্থন দেয়নি। তবে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন তিনি। শাকিল মোল্লা বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগছে। নির্বাচন করব বলে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল। দলের জন্য অনেক কাজ করেছি, কাজ করতে গিয়ে মারধর ও মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছি। গতকাল পর্যন্ত আশা ছিল দলের সমর্থন পাব, কিন্তু পাইনি।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ জামাল (ডানে) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা, ৯ জানুয়ারি। ছবি: নাসরিন আকতার
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ জামাল (ডানে) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা, ৯ জানুয়ারি। ছবি: নাসরিন আকতার

আজ দুপুরে ৪ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়া জামালের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে আসেন বিদায়ী ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জামাল মোস্তফা। তিনি বলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, দল তাঁকে সমর্থন না দিলেও তাঁর স্ত্রীকে দেবে। তবে তাঁর দলীয় সমর্থন নিশ্চিত হয়েছে।

জামাল মোস্তফা বলেন, তাঁর স্ত্রী অসুস্থ থাকায় সশরীরে এসে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিতে পারছেন না। এ কারণে আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে তিনি স্ত্রীর পক্ষে প্রত্যাহারপত্র জমা দিয়েছেন।

ঢাকা উত্তরে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন জাতীয় পার্টির নেতা মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘মহাজোট থেকে সমর্থন আশা করেছিলাম। কিন্তু পাইনি। এ কারণে আজ এ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী জয়নাল আবেদীনকে সমর্থন করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে এসেছি।’

২৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ জামাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম নির্বাচন করতে পারব। মানুষের সমর্থন পাব, পরিবারের সহযোগিতা পাব। কিন্তু এখন দেখছি অ্যাফোর্ড করতে পারব না। তাই প্রত্যাহার করছি।’