কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের জন্য দরকার সামাজিক আন্দোলন: ভিপি নুরুল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক। ঢাকা, ৯ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক। ঢাকা, ৯ জানুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনাকে সমস্ত প্রতিবাদের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। সিলেকটিভ (নির্দিষ্ট) কিছু ঘটনায় প্রতিবাদমুখর হয়ে থেমে গেলে সেই লক্ষ্য অর্জিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছেন নুরুল।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে ডাকসু ভিপি নুরুল হক এ আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের সড়কে নুরুলের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে পদযাত্রা’ শুরুর আগে এই সমাবেশ করা হয়। গত রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন।

সমাবেশে ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এখানে স্বস্তির পরিবর্তে আমাদের একটি উদ্বেগের জায়গা তৈরি হয়েছে যে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কতটুকু অনাস্থা থাকলে মানুষ অপরাধীকে ধরা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে। ইতিমধ্যে মানুষ প্রশ্ন তুলছে যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি কি আসল ধর্ষক, নাকি এটি আরেকটি জজ মিয়া নাটক? আমরাও জানি না যে আসলে ব্যাপারটা কী। তবে এটা একটা অ্যালার্মিং ব্যাপার যে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দিন দিন এভাবে মানুষের অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। সুতরাং সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেই আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে। ৫ জানুয়ারি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোনটি ধর্ষণের শিকার হওয়ার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গন উত্তাল হয়েছে, ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে মুখর হয়েছে।’

নুরুল হক বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন, মারধরের শিকার হয়েছেন। সেই ঘটনাটা নিয়ে সেভাবে জোরালো প্রতিবাদ হয়নি। আমরা যদি শুধু একটা ঘটনাকে নিয়ে প্রতিবাদে সরব হই, অন্য ঘটনাগুলো নিয়ে যদি কথা না বলি, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করি, যদি কিছু সিলেকটিভ ঘটনাতেই আমরা প্রতিবাদমুখর হই, তাহলে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করার আমাদের যে লক্ষ্য, সেটি অর্জিত হবে না। যখন কোনো ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ হয়, তখন ঘটনাগুলো নিয়ে প্রশাসনের শক্ত অবস্থান দেখা যায়। কিন্তু প্রতিবাদ থেমে গেলে ঘটনাগুলো আবার পর্দার আড়ালে চলে যায়। ছাত্রসমাজ ও দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান, শুধু সুনির্দিষ্ট দু-একটি ঘটনায় নয়, বরং সমাজে যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, সব ঘটনার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদী হতে হবে।’

অপরাধের ঘটনার জন্য রাষ্ট্রেরও দায় রয়েছে মন্তব্য করে ডাকসু ভিপি বলেন, ‘রাষ্ট্র তার আইন-আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই অপরাধের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে। দু-একটি ঘটনায় প্রতিবাদ করে থেমে গেলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না। তাই ধর্ষণ-নিপীড়নের মতো সমাজের সব নিপীড়ন-নির্যাতন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর বিকল্প নেই।’

তনু হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে ভিপি নুরুল বলেন, ‘ওই ঘটনার তিন বছর পার হয়েছে, আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যেহেতু ঘটনাটা ক্যান্টনমেন্টের মতো সুরক্ষিত একটা জায়গায় ঘটেছিল, সেখানে সরকার বা সেনাবাহিনীর ইমেজ জড়িত ছিল। সে জন্যই হয়তো ওই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়নি। সেই ঘটনায়ও দেশব্যাপী উত্তাল প্রতিবাদ হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ধর্ষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নেওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে তনুর হত্যাকারী ও ধর্ষকেরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তাকে ও সরকারকে ধিক্কার জানাই।’ বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বুয়েটে আবরার হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। এর ফলে বুয়েট থেকে অপরাধীদের আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু খুবই রহস্যজনক ও হাস্যকর ব্যাপার, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ও অনুমতিতে তাঁদের কয়েকজন পরীক্ষা দিতে পারছেন।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রমুখ। তাঁদের পদযাত্রাটি রাজু ভাস্কর্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।