জাতীয় ঐকমত্য গড়তে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ছবি: ফোকাস বাংলা
সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ছবি: ফোকাস বাংলা

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশানির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

আজ বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ, চলতি বছরের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এই আহ্বান জানান। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি।

১৬৩ পৃষ্ঠার দীর্ঘ ভাষণে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, যোগাযোগব্যবস্থা, তথ্য ও প্রযুক্তি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি ও বৈরিতার মধ্যেও দেশে সুশাসন সুসংহতকরণ এবং গণতন্ত্রচর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।

জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্টদের জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

আজ বিকেল চারটায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী চলতি সংসদের সদস্য ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব নিয়ে অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য মুলতবি করা হয়। সংসদের মুলতবি বৈঠক শুরুর পরে সংসদকক্ষে ঢোকেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় সশস্ত্রবাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্ভাষণ জানান। সংসদকক্ষে রাষ্ট্রপতি ঢোকার পর জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। রাষ্ট্রপতি তাঁর লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়ে শোনান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। জনগণের বিপুল সমর্থনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত–সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উত্তরণের সব যোগ্যতা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি, জুয়া, মাদক, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ এখন এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পরপর তিনটি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দ্রুত বেড়েছে। গত এক দশকে মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিন গুণ।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, এ বছর উদ্‌যাপিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। জাতির পিতার জীবনাদর্শ, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁর অব্যাহত সংগ্রাম, নির্ভীক, দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব এবং তাঁর গভীর দেশপ্রেম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। নতুন প্রজন্মের কাছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জাতির পিতার জীবনদর্শন ও কর্ম বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে মোট ২৯৩টি কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।