বিচার দূরে থাক, রহস্যই অজানা

অঞ্জলী দেবী
অঞ্জলী দেবী

চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অঞ্জলী দেবীর খুনি কারা, পাঁচ বছরেও জানা যায়নি। অগ্রগতি বলতে কেবল একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। কারা, কী উদ্দেশ্যে তাঁকে হত্যা করেছে, এখনো অন্ধকারে পুলিশ। পুলিশ শুধু এটুকু নিশ্চিত হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে চার 

যুবক অংশ নেয়। কিন্তু সেই চার যুবকের খোঁজ মেলেনি পাঁচ বছরেও।

আজ ১০ জানুয়ারি আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এত দিনেও খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটিত না হওয়ায় বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছে অঞ্জলীর পরিবার।

মামলার বাদী ও অঞ্জলীর স্বামী চিকিৎসক রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচার দূরে থাক, খুনের রহস্যই অজানা।’ এই অবস্থায় কীভাবে তাঁরা বিচারের আশা করতে পারেন।

২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বাসার পাশে নগরের চকবাজারের উর্দু গলিতে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন অঞ্জলী দেবী। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী বাদী হয়ে ওই দিন রাতে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।

ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আবু সাঈদ মো. রেজা নামে পটিয়ার এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা জঙ্গি এরশাদ হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও মোসাবিরুল ইসলামকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সর্বশেষ সন্ত্রাসী এহতেশামুল হক ওরফে ভোলাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সবাইকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু কারও কাছ থেকে অঞ্জলী হত্যার ক্লু (সূত্র) পাওয়া যায়নি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকারীরা চৌকস, ঘটনাস্থলে কোনো ক্লু রেখে যায়নি। যার কারণে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপের মুখে রয়েছেন। দিনদুপুরে বাসার পাশে একজন মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করে চার যুবক পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরও পুলিশ অন্ধকারে থাকায় জনমনেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ওই সূত্র জানায়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে চার যুবক অংশ নেয়। তাদের প্রত্যেকের কাঁধে স্কুলব্যাগ ছিল। ওই ব্যাগে করে তারা রামদা নিয়ে আসে। অঞ্জলী দেবীকে কুপিয়ে রামদা ব্যাগের ভেতর নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। হত্যাকারীরা ছিনতাইকারী হলে অঞ্জলীর মুঠোফোন ও টাকা কেড়ে নিত। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কিছুই নেয়নি তারা।

বর্তমানে সপ্তম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে মামলাটি তদন্ত করছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বর্মণ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার ক্লু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চার যুবককে শনাক্ত করা গেলে কিছু পাওয়া যেত। জঙ্গিদের হামলার ধরনের সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের মিল রয়েছে কি না, প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিরা এই কায়দায় বেশ কিছু খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এটির বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে তদন্তে কূলকিনারা না হওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশ থেকে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তরের জন্য গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আদালতে আবেদন করেন মামলার বাদী রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী। আদালত ২১ জানুয়ারি মামলার ধার্য দিনে এই বিষয়ে শুনানির জন্য রাখেন। একই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার ডকেটসহ হাজির হওয়ার জন্য আদেশ দেন।

অঞ্জলী হত্যার ক্লু উদ্‌ঘাটন না হওয়ায় আতঙ্কে আছেন তাঁর সহকর্মীরা। চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ রাধু মুহুরী প্রথম আলোকে বলেন, কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল না অঞ্জলী দেবীর। তাঁর খুনিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার শেষ করা হোক।

 ঘটনার পর শহরের বাসা ছেড়ে দিয়ে দুই চিকিৎসক মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী চলে যান রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী। সেখানে কিছুদিন থাকার পর এখন মেয়ের সঙ্গে মেহেরপুরে বাস করছেন এই চিকিৎসক।

ঘটনার পরপর বেশ কিছু হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও ক্লু উদ্‌ঘাটন হলেও অঞ্জলী হত্যার কিছুই পাওয়া যায়নি বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। তিনি বলেন, এখনো হাল ছাড়েনি পুলিশ।