শীতে মরছে মৌমাছি, ক্ষতির মুখে মৌচাষি

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষি শিশির কুমার। তীব্র শীতে ব্যাপক হারে মৌমাছি মারা যাওয়ায় অন্য মৌচাষিদের মতো তিনিও চিন্তিত। গত বুধবার রহিমপুরে।  প্রথম আলো
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষি শিশির কুমার। তীব্র শীতে ব্যাপক হারে মৌমাছি মারা যাওয়ায় অন্য মৌচাষিদের মতো তিনিও চিন্তিত। গত বুধবার রহিমপুরে। প্রথম আলো

চলতি বছর সিরাজগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। জেলার মাঠে মাঠে এখন হলুদের সমারোহ। সরিষাখেতগুলো ফুলে ফুলে ভরা। প্রকৃতি যেন হলুদের সাজে সেজেছে। আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে সরিষা ফুলের গন্ধ। কিন্তু জেলায় নতুন করে আবার জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। এই শীতে নতুন এক নতুন ক্ষতির কথা জানা যাচ্ছে। জেলার সরিষাখেতগুলোতে মৌ চাষ করতে আসা মৌচাষিরা পড়েছেন বিপদে। তীব্র শীতে প্রতিদিন হাজার হাজার মৌমাছি মারা গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা।

শৈত্যপ্রবাহ, কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে বাক্স থেকে বের হচ্ছে না মৌমাছিরা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মধু সংগ্রহ। আর যেসব মৌমাছি বাক্স থেকে বের হচ্ছে, শীতের কারণে সেগুলো যাচ্ছে মরে। শীতের তীব্রতার কারণে বাক্স থেকে বেরিয়ে মৌমাছিরা আর ফিরে আসতে পারছে না। এমনকি বাক্সগুলো চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রেখেও রক্ষা করা যাচ্ছে না মৌমাছিদের।

চলনবিলসহ শস্যভান্ডারখ্যাত এই জনপদে প্রতিবছর এই মৌসুমে দূরদূরান্ত থেকে মৌচাষিদের আগমন ঘটে। মাঠের পাশে শত শত মৌ বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষিরা। তবে সপ্তাহখানেক আগের টানা কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়া ও নতুন করে আবার শীত জেঁকে বসায় এখন বিপাকে পড়েছেন মৌচাষিরা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এসব জমির পাশে প্রায় ৩০ হাজার মৌমাছির বাক্স পেতে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। গত বুধবার সরেজমিনে জেলার বেশ কটি গ্রামে গিয়ে কথা হয় মৌচাষিদের সঙ্গে। উল্লাপাড়া উপজেলার বাঙ্গালা ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে মৌচাষি শিশির কুমার বলেন, ‘প্রতিদিন আধা ফ্রেম করে মাছি মরছে। কর্মক্ষম মাছিগুলো মরলে আমাদের ক্ষতি।এই আবহাওয়ার কারণে মৌমাছির ঠান্ডা লাগছে, পাতলা পায়খানা হচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে তীব্র শীত পড়ায় আমরা এখন চরম ক্ষতির মধ্যে।’

বেলকুচি উপজেলার আদাচাকি গ্রামের মৌ খামারি আবুল হোসেন বলেন, ‘অনেক আশা নিয়া আসছিলাম। আশা করেছিলাম,মৌমাছিগুলো প্রচুর মধু সংগ্রহ করবে। প্রচুর মধু উৎপাদন করতে পারব। কিন্তু তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে মৌ কলোনিগুলো ধ্বংসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

সিরাজগঞ্জ মৌচাষি সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর এলাকায়। তিনি বলেন, ‘এ বছর এখানে আসার পর আশা করেছিলাম লাভের মুখ দেখব। সেটি আর হলো না। এই শীতে মানুষ শীতের পোশাক পরেই যেখানে বাইরে বের হতে পারছে না, সেখানে মৌমাছি তো ছোট্ট প্রাণী। তারা বের হবে কীভাবে। একটু রোদ উঠলে যে মাছি ফুলের ওপর বসছে, কিছুক্ষণ পরেই তীব্র শীতের কারণে সে আর বাক্সে ফিরে আসতে পারছে না। এভাবে প্রতিদিন প্রতিটি বাক্সের ৪০০-৫০০ মৌমাছি মারা যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলায় পরপর দুবার প্রচণ্ড শীত পড়ে মৌচাষিরা কিছুটা ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। শৈত্যপ্রবাহের কারণে মৌচাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এ ব্যাপারে আমরা আগেই তাঁদের সতর্ক করেছি। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যেই রোদ উঠতে শুরু করবে। তখন চাষিরা তাঁদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।’