বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দিয়েছিল ব্রিটেনের পুলিশ: ড. কামাল

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১০ জানুয়ারি। ছবি: দীপু মালাকার
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১০ জানুয়ারি। ছবি: দীপু মালাকার

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরছিলেন, লন্ডন বিমানবন্দরে তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সম্মান জানানো হয়েছিল। ব্রিটেনের পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দিয়ে বলেছিল, ‘আপনার জন্য আমরা প্রার্থনা করেছিলাম।’ তখন বিশ্বব্যাপী বাঙালি শ্রদ্ধা ও সম্মান অর্জন করেছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের আয়োজিত আলোচনা সভায় কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু করাচি থেকে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে দেশে ফেরেন। সে সময় তাঁর সঙ্গী ছিলেন তরুণ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী কামাল হোসেন।

সেদিনের কথা মনে করে ড. কামাল বলেন, ‘এটা বিশেষ দিন। একসঙ্গে আমরা ফিরে এসেছি। আমার জন্য দিনটা আনন্দের।’ তিনি স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমরা অসাধারণ এক নেতৃত্ব পেয়েছিলাম। সেই নেতৃত্বের কারণেই আমাদের স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, ওনাকে (বঙ্গবন্ধু) সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সে প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, ‘দুঃখ লাগে, অন্যান্য দেশের জাতির জনক ২০-৩০ বছর সরকার প্রধান হিসেবে থাকেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে ওনাকে খুব কম সময়ের মধ্যে হারিয়েছি। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো ওনাকে বাঁচিয়ে না রাখতে পারা। বঙ্গবন্ধুকে হারানো দেশের অপূরণীয় ক্ষতি।’

বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের ব্যাপারে আপস করেননি উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, কোনো অন্যায় দেখলে তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। স্বাধীনতা মানে সব জনগণের, কোনো ব্যক্তির না। এখানে স্বৈরতন্ত্র থাকার কোনো অবকাশ নেই। নির্ভেজাল গণতন্ত্র থাকবে।

কামাল হোসেন বলেন, ‘জনগণের অধিকারে কোনো ঘাটতি থাকলে বোঝা যাবে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এত সভা, অনুষ্ঠান হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর উপায় হলো ওনার কথাগুলোকে ষোলো আনা পালন করা।’ প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী বলেন, সংসদ সার্বভৌম হিসেবে কাজ করতে পারছে কি না, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে কি না, এসবে যদি কোনো ঘাটতি থাকে তাহলে বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার গুরুত্ব উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, বিচারকেরা ঝুঁকি নিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে লাঞ্ছিত, অপমানিত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সত্য বলতে পিছপা হননি। তিনি দেশ ছেড়ে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়া লজ্জার। যাঁরা এসব করেন, তাঁদের বিবেকবোধ নেই, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নেই।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান, মহসিন রশীদ ও জগলুল হায়দার, যুগ্ম সম্পাদক মোশতাক আহমেদ প্রমুখ।