ঢাকার বেশির ভাগ স্থানেই হচ্ছে শব্দ দূষণ

‘তীব্র শব্দদূষণের কবলে ঢাকাবাসী’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাপা ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। ডিআরইউ, ঢাকা, ১০ জানুয়ারি। ছবি: দীপু মালাকার
‘তীব্র শব্দদূষণের কবলে ঢাকাবাসী’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাপা ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। ডিআরইউ, ঢাকা, ১০ জানুয়ারি। ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে। সরকার সচিবালয়ের চারপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করার পরেও সেখানে শব্দ দূষণ বন্ধ হয়নি। সচিবালয়ের চারপাশ ছাড়াও ঢাকার অন্য এলাকাগুলোতেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ক্যাপস এর যৌথ উদ্যোগে আজ শুক্রবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’এর নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘তীব্র শব্দ দূষণের কবলে ঢাকাবাসী’ শীর্ষক ওই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন গবেষণা দলের প্রধান ও ক্যাপস এর পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে গিয়ে অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সচিবালয় এলাকাকে নীরব ঘোষণার আগে ও পরে অর্থাৎ গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই এলাকায় জরিপ চালানো হয়। স্বয়ংক্রিয় সাউন্ড লেভেল মিটারের সাহায্যে ১২টি স্থানে দিনব্যাপী ৩০০ বার উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, সচিবালয় এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবেল থাকার কথা ছিল। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা কখনোই ৫০ ডেসিবেলের নিচে ছিল না।

গবেষণাটিতে দেখা গেছে, ১২টি স্থানের প্রতিটিতেই দিনের বেলায় শতভাগ সময় নীরব এলাকার জন্য প্রযোজ্য মানমাত্রার (৫০ ডেসিবেল) চেয়ে বেশি মাত্রায় শব্দ হয়েছে। ১২টি স্থানের মধ্যে সচিবালয়ের পশ্চিমে মসজিদের পাশের এলাকা বাদে সব জায়গায় ৭০ ভাগ এর বেশি সময় ধরে ৭০ ডেসিবেল (তীব্রতর) এর বেশি শব্দের মাত্রা ছিল। সামগ্রিকভাবে ১২টি স্থানে সম্মিলিতভাবে ৯১ দশমিক ৯৯ ভাগ সময় ৭০ ডেসিবেল (তীব্রতর) এর বেশি মাত্রার শব্দ হয়েছে। সর্বোচ্চ সময় ধরে তিনটি স্থানে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল। সেগুলো হলো- পল্টন বাস স্ট্যান্ড (১০০ ভাগ সময়), জিরো পয়েন্ট (৯৯ দশমিক ৪ ভাগ সময়) এবং কদম ফোয়ারা (৯৯ দশমিক ২ ভাগ সময়)। এই তিনটি জায়গায় নিয়মিতভাবে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেলের বেশি ছিল।

এ ছাড়া ক্যাপস-এর গবেষণা দল ঢাকা শহরের ৭০ টি এলাকায় শব্দ দূষণ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। গবেষণায় দেখা যায়, নীরব, আবাসিক ও মিশ্র এলাকার ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা ১০০ ভাগ সময় আদর্শ মানের ওপরে ছিল (নীরব এলাকার আদর্শ মান ৫০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকার আদর্শ মান ৫৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকার আদর্শ মান ৬০ ডেসিবেল)। বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে ৯৭ দশমিক ৫৮ ভাগ সময় বেশি মাত্রায় ছিল (বাণিজ্যিক এলাকার আদর্শ মান ৭০ ডেসিবেল)। শিল্প এলাকায় শব্দের মাত্রা আদর্শ মানের চেয়ে ৭১ দশমিক ৭৫ ভাগ সময় বেশি মাত্রায় ছিল (শিল্প এলাকার আদর্শ মান ৭৫ ডেসিবেল)।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সহসভাপতি মো. আবদুল মতিনের সভাপতিত্বে বাপা'এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন। এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক স্থপতি মুহাম্মাদ আলী নকী, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী।

সভাপতির বক্তব্যে মো. আবদুল মতিন বলেন, উচ্চ শব্দের কারণে মানুষ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সচেতনতা তৈরি করা ছাড়া শুধু আইন করে শব্দ দূষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই গাড়িতে ৩টি হর্ন ব্যবহার করেন, যার মধ্যে একটি হাইড্রোলিক হর্ন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই যখন আইনের তোয়াক্কা করেন না, তখন সাধারণ ট্রাক-বাসচালকরা কীভাবে আইন মানবে? সবার আগে সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শব্দ দূষণ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের জাতীয় জন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও বাপা) সমন্বিতভাবে পরিবেশ বিষয়ক কাজ করে যাবে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নীতিনির্ধারকদের মানসিকতা পরিবর্তনের পাশাপাশি শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। শব্দ দূষণের কারণে স্বাস্থ্যগত এবং সামাজিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়েও বেশি। তাই একে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।