ইজতেমা ময়দানে বয়ান শুনছেন লাখো মুসল্লি, ছয়জনের মৃত্যু

মহাসড়কসহ তুরাগপাড়ে জুমার নামাজে মুসল্লিরা। টঙ্গী, ঢাকা, ১০ জানুয়ারি। ছবি: আশরাফুল আলম
মহাসড়কসহ তুরাগপাড়ে জুমার নামাজে মুসল্লিরা। টঙ্গী, ঢাকা, ১০ জানুয়ারি। ছবি: আশরাফুল আলম

টঙ্গীর তুরাগতীরে লাখো মানুষের জমায়েত। বিশাল মাঠজুড়ে তৈরি শামিয়ানার ভেতরে-বাইরে মুসল্লিদের চলাফেরা। কখনো ঘন কুয়াশা, কখনো কনকনে শীত, কখনোবা শেষ পৌষের ঠান্ডা বাতাস। এর মাঝেই চলছে বয়ান, জিকির-আসকার, ইবাদত, খাওয়া-দাওয়া ও আনুষঙ্গিক কাজ। এভাবে চলছে টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন।

এদিকে ইজতেমায় যোগ দিতে আসা ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ পর্বে অংশ নিয়েছেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। সকালের কনকনে শীত, ঘন কুয়াশা আর পৌষের শেষ দিকের ঠান্ডা বাতাসসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করছেন সমবেত লাখো মুসল্লি। আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।

শনিবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা আবদুর রহমানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের ইজতেমা। সকালে ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে প্রচুর মানুষের সমাগম। সড়ক-মহাসড়কে লাইন ধরে হাঁটছেন মুসল্লিরা। কারও মাথায়, কারও কাঁধে আবার কারও হাতে একাধিক ব্যাগ, শুকনা খাবার। এর মধ্যে অনেকে ইজতেমা ময়দানে জায়গা না পেয়ে বা দলছুট হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন এদিক-সেদিক। অনেকে রাত যাপন করেছেন রাস্তার পাশে, গাছের নিচে। তবে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে শুনছিলেন মাইকে ভেসে আসা মুরুব্বিদের বয়ান।

সকাল আটটার দিকে রাজধানী ঢাকার উত্তরার রানাবোলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন ইজতেমায় আসা মুসল্লিরা। তাঁদের কেউ গাছের নিচে, কেউবা সড়কের পাশের ঢালু জায়গায় অবস্থান করছেন। কথা হলো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আসা তাবলিগ জামাতের সাথি নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, শুক্রবার ইজতেমায় যোগ দিতে এসে রাত হয়ে গেছে। এ কারণে আর মাঠের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পরে চট বিছিয়ে রাত যাপন করেছেন সড়কের ঢালুতে। রাতে ভেতরে যাননি। এখন ভেতরে গেয়ে সাথিদের খুঁজবেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আসা মুহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, ‘ভেতরে নিজেদের জামাতের লোকজনেরই জায়গা হয় না। পরে বাধ্য হয়ে বাইরে চলে আসছি। তবে আল্লাহ ও রাসুলের কথা শুনতে এসে এসব কষ্ট কোনো কষ্ট মনে হয় না। সকাল থেকেই মুরুব্বিরা বয়ান করছেন।’

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের ইজতেমা। তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের ইজতেমা শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি থেকে।

আজ যাঁরা বয়ান করবেন
শনিবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা আবদুর রহমান। এরপর বাদ জোহর বয়ান করবেন পাকিস্তান থেকে আসা মাওলানা ইসমাইল গুদরা। বাদ আসর বয়ান শুরু করবেন মাওলানা জুহাইরুল হাসান এবং বাদ মাগরিব বয়ান করবেন মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। তাঁরা দুজনই এসেছেন ভারত থেকে।

প্রথম পর্বের ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম প্রথম আলোকে বলেন, মুরব্বিদের আমবয়ানের মধ্যেও তাবলিগের শীর্ষপর্যায়ের মুরব্বিরা ইমান ও আমল নিয়ে কথা বলবেন। তিনি বলেন, এবারের ইজতেমায় মানুষের প্রচুর সাড়া পড়েছে। সাড়া দেশ থেকে মুসল্লিরা ভেঙে পড়েছেন ইজতেমা ময়দানের দিকে।

ছয় মুসল্লির মৃত্যু
ইজতেমায় যোগ দিতে আসা ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া এলাকার মো. ইয়াকুব আলী (৭৫), চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আলী (৭০), সিরাজগঞ্জের খোকা মিয়া (৬০), নওগাঁর শহিদুল ইসলাম (৫৫), কুমিল্লার তমিজ উদ্দিন এবং রাজশাহীর আব্দুর রাজ্জাক (৬৭)।

বিদেশি মুসল্লির উপস্থিতি
ইজতেমা শুরুর আগ থেকেই ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, কাজাখস্তান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইথিওপিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি মুসল্লিরা আসতে থাকেন। এর মধ্যে আজ সকাল পর্যন্ত পর্যন্ত ৪৬টি দেশ থেকে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন বিদেশি মুসল্লি এসেছেন বলে জানা গেছে। আজ ও আগামীকাল সকালের মধ্যে এ সংখ্যা বাড়বে বলে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।