জমজমাট আয়োজনে ঢাকা মহানগর বন্ধু সম্মেলন
প্রাণোচ্ছল তরুণদের হাততালিতে মুখর ছিল কারওয়ান বাজারের টিসিবি মিলনায়তন। ঢাকা মহানগর বন্ধু সম্মেলন-২০২০ উপলক্ষে মিলনায়তনে সমবেত হয়েছিলেন বন্ধুসভার প্রায় ৪৫০ জন বন্ধু। ‘আমরা নতুন যৌবনের দূত’ স্লোগান লেখা বড় ব্যানারের সামনে বন্ধুসভার সদস্যদের অনুপ্রেরণার কথা বলেন অতিথিরা।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আশুলিয়া ও ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলের বন্ধুসভার সদস্যরা সম্মেলনে যোগ দেন।
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত ও বন্ধুসভার থিম সং ‘ও বন্ধু সব বন্ধু’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় মূল পর্ব। উপস্থাপক মৌসুমি মৌ মঞ্চে ডাকেন মহানগর বন্ধু সম্মেলন-২০২০-এর আহ্বায়ক জান্নাতুল বাকেরকে। আগত বন্ধুদের স্বাগত জানান তিনি।
এরপর সম্মেলন উদযাপন পর্ষদের উপদেষ্টা মুমিত আল রশিদ ও শাকিল মাহবুব বক্তব্য দেন।
পরবর্তী সময়ে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশনের উপস্থাপনায় মঞ্চে আসেন বিভিন্ন বন্ধুসভার বিদায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা।
এরপর ছিল বন্ধুসভা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্ব। বন্ধুরা প্রশ্ন করেন সম্মেলনের উপদেষ্টা, আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব বরাবর। উত্তর দেন সম্মেলনের উপদেষ্টা ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন, জাতীয় পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি শাকিল মাহবুব, মুমিত আল রশিদ, সম্মেলনের আহ্বায়ক জান্নাতুল বাকের ও সদস্যসচিব কামরুন্নাহার মৌসুমী।
আয়োজনে বন্ধুদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন পত্রিকার যাত্রা শুরু করি, প্রথম আলোর নাম নিয়ে একসময় অনেক গুণীজন আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি, প্রথম আলো নামটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কাজটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা স্বাধীন, নিরপেক্ষভাবে কাজ করি। কারও মুখের দিকে তাকিয়ে, চাপের মধ্যে পড়ে কিছু করি না। আমরা সততার সঙ্গে পথ চলি। আমাদের লক্ষ্য ছিল কারও মুখের দিকে তাকিয়ে চলব না। আজও মূল লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হইনি।’
প্রথম আলোর সম্পাদক আরও বলেন, ‘প্রথম আলোর মতো একই উদ্দেশ্য নিয়ে বন্ধুসভা কাজ করে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ নিয়ে বন্ধুসভা এগিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে পড়ে, সিডরের সময় আট মাস ধরে বন্ধুসভা কীভাবে কাজ করেছে। অ্যাসিড সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়েছে। সরকার ক্ষতিকর অ্যাসিডের বিরুদ্ধে আইও করেছে। আমরা বলতে পারি, এটি বন্ধুসভার একটি সফলতা। বন্ধুসভা একটি কাজ করে, নতুন জামা কার্যক্রম, একজন বন্ধু দুটি গাছসহ বেশ কিছু ভালো কার্যক্রম করে। আমরা চেষ্টা করছি প্রথম আলোর পাঠক ও বন্ধুসভার বন্ধুদের নিয়ে নতুন একটা প্রজন্ম তৈরি করার, যারা হবে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। প্রথম আলোর পাঠক ও বন্ধুসভার বন্ধুদের নিয়ে আমরা বাংলাদেশের জয়যাত্রায় অংশ নিতে চাই।’
আনিসুল হক বলেন, ‘সক্রেটিসের কথায় দেশপ্রেম হলো নিজের কাজ ভালোভাবে করা। আমাদের বন্ধুদের উদ্দেশ্য একটু একটু ভালো কাজ করে নিজেকে সুন্দর করা, একটু একটু ভালো কাজ করে দেশকে সুন্দর করা। বাংলাদেশের চাকাটা এগিয়ে নিতে আমরা সবাই ঠেলছি। সবাই যে পারবে, এমন নয়। তবে চেষ্টা করতে হবে। আমরা সবাই জেগে উঠব। নিজেরা জাগব। অন্যদের জাগাব।’
কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম বলেন, ‘বন্ধুসভার কাজে আমি অভিভূত। তরুণেরা যতটা মানবিক কাজে যুক্ত হবে, দেশটা তত সুন্দর হবে। আমাদের তরুণেরা এখন অনেকটা হতাশ। আমি মনে করি বন্ধুসভার বন্ধুদের মতো বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকলে হতাশা কেটে যাবে।’
ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দিন হাসান বলেন, ‘বন্ধুসভার কাজের পরিধি জেনে আমি অভিভূত। তরুণ-তরুণীরা এত ভালো ভালো কাজ করেন, দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। আমরা যদি দেশকে কিছু দিতে চাই, তাহলে আমাদের নিজেদের কাজটা ভালোভাবে করতে হবে। আমাদের গ্রুপটা শূন্য থেকে শুরু করে আজ প্রায় ৩২টা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমাদের অধীনে অনেক কর্মী কাজ করেন। বন্ধুসভার বন্ধুদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে আমরা সব সময় নিজেদের ভিত্তি মজবুত করি।’
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘অহেতুক আমরা হীনম্মন্যতায় ভুগব না, অন্যের দোষ খোঁজার চেষ্টা করব না। বন্ধুসভা একটা বড় শক্তি। আমরা শুধু অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব না। আমরা নিজদের মধ্যে আরও কাজ বাড়িয়ে দেব। যার যে ইচ্ছে, সেটি নিয়ে এগিয়ে যাব। নিয়মিত জ্ঞানী-গুণী মানুষদের সংস্পর্শে যাব। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নয়, অন্যান্য বিষয়েও গুরুত্ব দেব। বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, বিপদের জন্য, বিপাকের জন্য এবং হারানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বন্ধুসভার এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (সিটি ক্যাম্পাস), সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, যাত্রাবাড়ী বন্ধুসভা, মিরপুর বন্ধুসভা, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ঢা.বি), মাইল স্টোন কলেজ, সাভার বন্ধুসভা, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা বন্ধুসভা, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (আশুলিয়া ক্যাম্পাস), ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল বন্ধুসভা অংশ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বন্ধুসভার কমিটি ঘোষণা করেন আনিসুল হক। উত্তম রয়কে সভাপতি ও গাজী আনিসকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য ঘোষিত হয়েছে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার কমিটি।