পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো গ্রহণযোগ্য নয়: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: বাসস
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: বাসস

চট্টগ্রামে বাইপাস সড়ক নির্মাণের নামে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসসংলগ্ন পাহাড় কাটার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্য হচ্ছে পাহাড়। সেই পাহাড়কে সংরক্ষণ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা সিডিএর মতো একটি প্রতিষ্ঠান যেভাবে পাহাড় কেটে সেখানে রাস্তা বানিয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে শনিবার সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের সাবেক শিক্ষার্থী ও নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল। বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউটের প্রবীণ শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন।

পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় সরকারি সংস্থাগুলোর আরও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি খেয়াল করে না। আমি অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছি, সিডিএর মতো একটি প্রতিষ্ঠান রাস্তা বানাতে গিয়ে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির পাশে ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলেছে। এটি আমাকে প্রচণ্ড পীড়া দিয়েছে।’

চট্টগ্রামে উন্নয়ন করার সময় পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভবন নির্মাণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে যেন এই পরিবেশ-প্রকৃতি নষ্ট না হয়, এই নান্দনিকতা যেন হারিয়ে না যায়, সেটি মাথায় রাখতে হবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ পৃথিবীতে সর্বনিম্ন। এরপরও বাংলাদেশ পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ আজকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে একটি কেস স্টাডি। কীভাবে পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ, যে দেশে মাথাপিছু জমির পরিমাণ পৃথিবীতে সর্বনিম্ন, ঝড়-বন্যা, জলোচ্ছ্বাস যে দেশের নিত্য সঙ্গী, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যেখানে দৃশ্যমান–বিদ্যমান, সেই দেশ কীভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো, এটি আজকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে বড় বিস্ময়। এটি সম্ভব হয়েছে, কারণ এই দেশ ছোট হলেও উর্বর দেশ।

স্মৃতিচারণা করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখনই কোনো অনুষ্ঠানের ডাক পাই, সেটি আমার কাছে সব সময়ই অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি প্রস্তাব মনে হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু স্মৃতি আমার। সব সময় ইচ্ছা থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পুরোনো স্মৃতিগুলোকে খুঁজে বেড়ানোর। সারা ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়ানোর প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও গাছ লাগানোর প্রস্তাব দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার তিন সন্তানের মধ্যে দুজনের জন্ম বেলজিয়ামে। জন্মের কয়েক দিন পর আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চিঠি পাই। সেখানে লেখা ছিল, তোমাদের সন্তানদের নিয়ে অমুক দিন অমুক জায়গায় হাজির হতে হবে। সেখানে একটি গাছ লাগানো হবে এবং একটি নামফলক থাকবে। সেই গাছ থেকে যাবে, নামফলকও থেকে যাবে। অর্থাৎ প্রতি সন্তান জন্মলাভের পর সেখানে সন্তানের নামে একটি গাছ লাগানো হয়। সেই গাছ থেকে যায়।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পাসে যত নবজাতকের জন্ম হবে, তাদের নামে যেন একটি করে গাছ লাগানো হয়। এই কাজ করতে পারলে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম কর্তৃপক্ষ হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকেই চাইলেও এই কাজ করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেও পারবে না, কারণ সেখানে গাছ লাগানোর জায়গা নেই।

পরিবেশ বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার কোনো কোনো জায়গায় এখন দাবানল ও খরতাপ দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের মতো জায়গায় হচ্ছে বন্যা। পৃথিবীর মাত্র এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এই বিপর্যয়। মানুষ যেভাবে নির্বিচারে কার্বন নিঃসরণ ঘটাচ্ছে, প্যারিস চুক্তিতে বিভিন্ন দেশ যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছে, তা যদি পুরোপুরি বাস্তবায়নও হয়, পৃথিবীর তাপমাত্রা সাড়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার কারণে যেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা দাঁড়িয়েছি। সেখানে তাপমাত্রা সাড়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, সেটি অনুমান করাও কঠিন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান গাছ লাগানোর ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রোপণের জন্য আমরা দুই হাজার চারা দেব।’

নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন।