ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িত স্টেশনকেন্দ্রিক অপরাধীদের নাম বলেছেন মজনু

মজনু
মজনু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার মজনু পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরও তাঁর চার–পাঁচজন সহযোগীর নাম বলেছেন। রেলওয়ে স্টেশনকেন্দ্রিক দলটি ধর্ষণসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মজনুকে উদ্ধৃত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সূত্রগুলো প্রথম আলোকে এ কথা জানিয়েছে।

৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। গত বুধবার মজনুকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। ওই দিন সকালেই ছবি ও ভিডিও দেখে ছাত্রীটি মজনুকে শনাক্ত করে। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।

ডিবি কর্মকর্তারা মজনুকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান এবং ঘটনার পরম্পরা জানাতে বলেন। পুরো বিষয়টির ভিডিও ধারণ করেন তাঁরা। মজনু জানান, তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে হেঁটে গল্‌ফ ক্লাবের সামনে উঁচু স্থানে পা ঝুলিয়ে বসে ছিলেন। ওই সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে দেখেন তিনি। মেয়েটি কোন দিকে এগোবেন, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তখনই তিনি মুখ চেপে পাঁজাকোলা করে তাঁকে ঝোপের দিকে নিয়ে যান। মজনু বলেন, কিছুটা এগোনোর পর তিনি ছাত্রীটিকে টেনেহিঁচড়ে ভেতরের দিকে নিয়ে যান। এ সময় ছাত্রীটি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তিনি চিৎকার করেন। বারবার তাঁকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ করেন। ওই সময় মজনু তাঁর গলা টিপে ধরেন। ধর্ষণের পর তিনি মেয়েটির কাছে তাঁর নাম–ঠিকানা জানতে চান। মেয়েটি তাঁর নাম বলেন এবং গাজীপুরে যাবেন বলে জানান। রাত আনুমানিক সোয়া আটটার দিকে ওই পথ দিয়ে পুলিশের টহল গাড়ি যেতে দেখেন। তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ছেড়ে দিলে তিনি ধরা পড়ে যেতে পারেন, এ আশঙ্কা থেকে আটকে রাখেন। তাঁর বুকে–পেটে ঘুষিও দিতে থাকেন।

>

যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধর্ষণবিরোধী ক্যাম্পেইন কর্মসূচি ঘোষণা

একটা সময় মজনু মেয়েটির কাছ থেকে টাকা চান। এর আগেই তিনি ছাত্রীর মুঠোফোন পকেটে ভরে ফেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী মজনুকে ব্যাগ হাতে দিয়ে বলেন, ভেতরে টাকা আছে। ব্যাগ হাতড়াতে শুরু করলে মেয়েটি দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ফুটপাতের ধার ঘেঁষে যে শিকল রয়েছে, তাতে পা বিঁধে পড়েও যান। তখনো মজনু তাঁকে পেছন থেকে ডাকতে থাকেন। ওই রাতে তিনি সহযোগী অরুণার কাছে ছাত্রীটির মুঠোফোন বিক্রি করে দেন, কিন্তু ব্যাগটি রেখে দেন নিজের কাছে। সকালে নরসিংদীতে যান, ফিরে এসে সৈনিক ক্লাবে একটি সিনেমা দেখবেন বলে ঠিক করেছিলেন। বিদ্যুৎ না থাকায় সিনেমা হলে জেনারেটর চলছিল। তিনি সিনেমা না দেখেই চলে যান শেওড়ায়। সেখান থেকেই পরে গ্রেপ্তার হন।

চক্রের সদস্য মজনু

মজনু এখন ডিবি হেফাজতে সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গতকাল শনিবার ডিবি (উত্তর) উপকমিশনার প্রথম আলোকে বলেন, মজনু সেদিনকার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর দেওয়া বিবরণের সঙ্গে সেটি মিলিয়ে দেখা হয়েছে।

অভিযুক্ত মজনু বলেছেন, তাঁর জীবনযাপন মূলত রেলওয়ে স্টেশনকেন্দ্রিক। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাতিয়া থেকে চট্টগ্রামে চলে যান। বাবা ছিলেন ভিক্ষুক। পথেই থাকতেন। এরপর থেকে তিনি কখনো ভিক্ষা করতেন, কখনো বোতল কুড়াতেন, কখনো কুলির কাজ করে বা চুরি–ছিনতাই করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর সঙ্গে ভাসমান যৌনকর্মী, মাদকসেবী, চোর–ছিনতাইকারী, রিকশা ও সিএনজিচালকদের ওঠাবসা রয়েছে। তাঁরা নিজেদের মধ্যে চুরি–ছিনতাই করে পাওয়া জিনিসপত্র বিনিময় করেন। যাঁরা ভাসমান তাঁরা থাকেন প্রধানত পরিত্যক্ত ওয়াগনে। মজনু দাবি করেছেন, তিনি নিজে রাস্তা থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী নারীদের তুলে এনে আটকে রাখতেন।

প্রতিবাদ

এদিকে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও নারীর জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার দাবিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ধর্ষণবিরোধী গণপদযাত্রা করেছে যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোট। দাবি আদায়ে ১৫ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর আর ২ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় ‘জাগো মানুষ, জাগো বহ্নিশিখা’ শীর্ষক ধর্ষণবিরোধী ক্যাম্পেইন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এই শিক্ষার্থী জোট।