সখীপুরে বনের জমি দখল করে আ.লীগের কার্যালয়

সখীপুর-ঢাকা সড়কের পাশে নলুয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে বনের জমি দখল করে যাদবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের নির্মাণকাজ চলছে।  ছবি: প্রথম আলো
সখীপুর-ঢাকা সড়কের পাশে নলুয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে বনের জমি দখল করে যাদবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের নির্মাণকাজ চলছে। ছবি: প্রথম আলো

বনের জমি দখল করে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সখীপুর-ঢাকা সড়কের পাশে নলুয়া বাজারে মূল্যবান প্রায় ১০ শতাংশ জমি দখল করে এ ঘর নির্মাণের কাজ চলছে।

যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান এ ঘর নির্মাণে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে অভিযোগ। তাই বন বিভাগের পক্ষ থেকে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। আতিকুর স্থানীয় সাংসদের সহোদর।

উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর যাদবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিল্লাল হোসেন সভাপতি ও শহীদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর সাংসদের ভাই যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমানের পরামর্শে তাঁরা সখীপুর-ঢাকা সড়কের পাশে নলুয়া বাজারে দক্ষিণ সীমান্তে ২ নম্বর খতিয়ানভুক্ত (বনের সব জমিই ২ নম্বর খতিয়ানভুক্ত) ৮৪৯ দাগে আনুমানিক ১০ শতাংশ জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় বানানো শুরু করেন। ২৭ ডিসেম্বর ওই জমিতে একটি বড় আকারের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে সেটির ছবিসহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন শহীদুল। এরপর জমিতে মাটি ফেলে ঘর তোলার উপযোগী করা হয়। ১ জানুয়ারি বছরের প্রথম দিন ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের একত্র করে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

গত শুক্রবার দুপুরে নলুয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নলুয়া বিট কার্যালয়ের ২০ গজ পূর্ব-দক্ষিণে পাকা সড়কের পাশে ১৬ থেকে ১৮ হাত লম্বা রঙিন টিনের একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরের সামনে সড়ক ঘেঁষে একটি বড় আকারের সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। ঘরের মেঝে পাকা করার জন্য এক ট্রাক ইট আনা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঘরের মেঝে পাকা করার কাজ শুরু হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের যেকোনো দিন দলীয় কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলেছে, দলীয় কার্যালয় আর্থিকভাবে চালানোর জন্য পাশে একটি দোকানঘর ও চা–স্টলের জন্য কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। দোকানঘর ও চা–স্টলের ভাড়ার টাকায় দলীয় কার্যালয়ের আনুষঙ্গিক খরচ মেটানো হবে।

বনের জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় বানানোর প্রসঙ্গে যাদবপুর ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা যদি বনের জমি দখল করে ঘর দিতেন, তাহলে পরদিনই সবার নামে মামলা হতো। এত দিন কারাগারে বাস করতে হতো। 

এ বিষয়ে যাদবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম দাবি করেন, সখীপুরে বনের জমিতে অনেক বাড়িঘর উঠছে। বনের জমি দখল করে বাজার নির্মাণ ও পাকা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। সেগুলো তো কেউ দেখছে না। আর এটা হচ্ছে দলীয় কার্যালয়। তাঁরা সামান্য কিছু বনের জমিতে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করার কাজ করছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, ‘মাত্র এক থেকে দেড় শতাংশ বনের জমির ওপর দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এতে দোষের কিছু দেখছি না।’

টাঙ্গাইল বন বিভাগের নলুয়া বিট কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম ও বাঁশতৈল রেঞ্জের কর্মকর্তা (আরও) দেলোয়ার রহমানের কাছে বনের জমিতে কীভাবে দলীয় কার্যালয় হচ্ছে, জানতে চাইলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁরা শুধু বলেন, এ বিষয়টি ছাড়া যেকোনো প্রশ্ন করেন, তার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুতুব উদ্দিন বলেন, বনের জমি দখল করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় হচ্ছে, এ বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে বনের জমিতে দলীয় কার্যালয় বানানো ঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে সাংসদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।