কপোতাক্ষে বালু তোলায় ঝুঁকিতে দুই সেতু

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় কপোতাক্ষ সেতুর কাছে কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। সম্প্রতি তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় কপোতাক্ষ সেতুর কাছে কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদ থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। বালু তোলার ঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলা সদর এলাকায় নদের ওপর নির্মিত দুই সেতু।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এ বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিকরগাছা বাজারের শেষ অংশের পশ্চিম পাশে উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে গেছে কপোতাক্ষ নদ। নদের ওপর সেতু। নাম কপোতাক্ষ সেতু। কপোতাক্ষ সেতুর প্রায় ৩০০ মিটার দক্ষিণে ঝিকরগাছা রেলসেতু। ঝিকরগাছা রেলসেতুর দক্ষিণ পাশে দুটি জায়গায় কপোতাক্ষ নদে ভাসছে দুটি পাটাতন (বোর্ড)। তেলের কয়েকটি টিনের ড্রামের ওপর তক্তা বিছিয়ে বাঁশের সঙ্গে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে তৈরি করা হয়েছে পাটাতন। ভাসমান পাটাতন দুটি সুবিধামতো নদের বিভিন্ন স্থানে সরানো হচ্ছে। দুটি বালু তোলার যন্ত্র (ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপের মোটর) রয়েছে পাটাতনের ওপর। একটি যন্ত্র থেকে পাইপ নদে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে নদ থেকে বালু কেটে ওপরে তোলা হচ্ছে এবং অপর যন্ত্রটি সেই বালু প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে সামনে ঠেলে দিচ্ছে। কিছুটা দূরে নদের মধ্যে নিচু জায়গা বাঁশ ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেড়া তৈরি করে ঘিরে রাখা হয়েছে। ওই জায়গা থেকে পানি বেরিয়ে বালু আটকে রাখতে বেড়ার তিন পাশে জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে ঠেলে দেওয়া পানির সঙ্গে সেই বালু নিচু জায়গায় গিয়ে পড়ছে। পানি বেরিয়ে গিয়ে বালু পড়ে উঁচু হচ্ছে নদের নিচু জায়গা।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র কয়েক দিন আগে কপোতাক্ষ সেতুর মাত্র ৫০০ গজ দূর থেকে বালু তোলেন উপজেলার হাজিরালী গ্রামের মাহাবুর রহমান। পরে তিনি এই বালু বিক্রি করেন। বর্তমানে ঝিকরগাছা রেলসেতুর প্রায় ৫০০ গজ দক্ষিণে মোবারকপুর নিমতলা ঘাট এলাকা থেকে বালু তোলা হচ্ছে। উপজেলার কাউরিয়া গ্রামের তরিকুল ইসলাম এই বালু তুলে নদের মধ্যে নিচু জায়গায় রেখে বিক্রি করছেন।

বালু উত্তোলনকারী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদের পাড়ে আমাদের ২০ শতক জমি আছে। ওই জায়গা নিচু। সিস্টেমে নেই, তারপরও নদ সরকারি বলে নদের জায়গা থেকে বালু তুলে ওই নিচু জমি ভরাট করে নিচ্ছি। পাঁচ দিন ধরে বালু তুলছি। আরও কয়েক দিন লাগবে। তবে আমি বালু বিক্রি করছি না।’
অপর বালু উত্তোলনকারী মাহাবুর রহমান বলেন, ‘নদের পাশে মাদ্রাসার জমি রয়েছে। ওই জমি ভেঙে নদের মধ্যে চলে গেছে। বালু তুলে ওই জমির কিছুটা আমি ভরাট করে দিয়েছি।’

কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস বসবাস করেন ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে। তিনি বলেন, কপোতাক্ষ নদের বিভিন্ন জায়গা থেকে দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। বর্তমানে যে অংশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে কপোতাক্ষ সেতু এবং ঝিকরগাছা রেলসেতু দুটি ঝুঁকি ছাড়াও নদের পাড় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী শ্যামল কুমার বসু বলেন, নদ থেকে বালু উত্তোলন করায় সেতু দুটির স্থায়িত্বকাল নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝিকরগাছার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কপোতাক্ষ নদ থেকে বালু তোলার খবর পেয়েছি। একজন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে সরেজমিনে বালু তোলা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এরপরও বালু তোলা বন্ধ না হলে আমি নিজে গিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’