চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে দুই নেতার মর্যাদার লড়াই আজ

মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও  মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। ছবি: সংগৃহীত
মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। ছবি: সংগৃহীত

দুই প্রার্থীই একে অপরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। নৌকার প্রার্থী দিয়েছেন কালুরঘাটে নতুন সেতু দৃশ্যমান করাসহ উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থীর শঙ্কা কেবল সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর শঙ্কার মধ্যেই আজ ১৩ জানুয়ারি সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-পাঁচলাইশ-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচন। নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। দক্ষিণে দুই দলের দুই বড় নেতার মধ্যে এটা মর্যাদার নির্বাচন।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান যথাক্রমে নৌকা এবং ধানের শীষের প্রার্থী। ২০১৮ সালে সুফিয়ান চট্টগ্রাম-৮ থেকে এবং ১৯৯৬ সালে মোছলেম পটিয়া থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু কেউ জিততে পারেননি। তাই এবারের নির্বাচনটি দুজনের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।

আজ সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু। চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

উপনির্বাচনটি সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল রোববার সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ পাহারায় সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারপরও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে বিএনপির প্রার্থী ও ভোটারদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বিজিবি ও র‍্যাবের টহল শুরু হয়ে গেছে। কোনো ধরনের শঙ্কা নেই।

বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনের নির্বাচনের দিকে সবার দৃষ্টি। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় এই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ তেমন চোখে পড়েনি। শনিবার অনুষ্ঠিত মক ভোটিংয়ে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম।

ভোটকেন্দ্র ও নিরাপত্তা
উপনির্বাচনে ১৭০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ১৯৮ জন। মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৮৭ জন। এর মধ্যে বোয়ালখালী অংশে ৬৯টি কেন্দ্রের বিপরীতে ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৩১ ভোট। চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ (শহরের অংশ) এলাকায় যথাক্রমে ৬১ ও ৪০টি কেন্দ্র রয়েছে। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ৩৫৪ জন। 

৫৮টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া নির্বাচনে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যের সমন্বয়ে ১৪টি মোবাইল ফোর্স, ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‍্যাবের ৬টি টহল দল এবং ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিতে ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও দুজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। সেখান থেকে ফল ঘোষণা করা হবে।

চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হবে বলে আমার বিশ্বাস। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে। র‍্যাব, পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি বিজিবির টহল থাকবে।’

প্রতিদ্বন্দ্বিতা নৌকা ও ধানের শীষে
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন। এর মধ্যে নৌকা ও ধানের শীষের দুই প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। মোছলেম উদ্দিনের বাড়ি বোয়ালখালীর কদুরখিলে। সুফিয়ান নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি সেখানকার ভোটার।

নির্বাচন সামনে রেখে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ, চান্দগাঁও মোহরাসহ শহরের অংশের এবড়োখেবড়ো কাঁচা সড়কসহ নানা ইস্যু সামনে আসে। 

জানতে চাইলে মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত রাখতে এবং কালুরঘাট সেতু নির্মাণের সরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান করতে আমি চান্দগাঁও বোয়ালখালীবাসীর কাছে ভোট চাই।’

আবু সুফিয়ান বলেন, ‘যদি মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে তাহলে ভোটবিপ্লব হবে। এই আসনের উন্নয়নের জন্য ধানের শীষের বিকল্প নেই। গত ১২ বছর এখানে কোনো উন্নয়ন হয়নি।’ 

এ ছাড়া টেলিভিশন প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, কুঁড়েঘর প্রতীকে ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত ও আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে দুই প্রধান প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে গেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাঁরা অভিযোগ জমা দিয়েছেন। গত শনিবার মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ হয়। প্রচারণা শেষ হওয়ার পরও বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান তাঁর এজেন্ট এবং কর্মীদের হুমকি–ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।

জানতে চাইলে আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এজেন্ট ও কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়গুলো রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হচ্ছে।’ 

আবু সুফিয়ান আরও বলেন, ‘শুধু ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিরপেক্ষ করুক। ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে যেন বাধা না দেয়, এই দিকটা নিশ্চিত করতে বলেছি বারবার।’

এর আগে বৃহস্পতিবার বোয়ালখালীতে বিএনপি নেতা পৌর মেয়র আবুল কালাম আবু ও মোস্তাক আহমদ খানসহ ১৫ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শনিবার রাতেও নগর ও বোয়ালখালীর বিভিন্ন স্থানে কিছু নেতা-কর্মীর ঘরে পুলিশ হানা দেয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মোছলেম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, তারা (বিএনপি) অভিযোগ পার্টি। নিশ্চিত পরাজয় জেনে আগেভাগে অভিযোগ দিচ্ছে। সুন্দর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে।