লক্ষ্মীপুরে ১২ মাসে ৩০ খুন

লক্ষ্মীপুর জেলায় গত এক বছরে খুন হয়েছেন ৩০ জন। এর মধ্যে গত অক্টোবরে এক মাসেই হত্যার শিকার হয়েছেন ছয়জন। বেশি হত্যাকাণ্ড লক্ষ্মীপুর সদর থানায়। আটজন খুন হন এই উপজেলায়। তবে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে খুনের ঘটনা কমেছে। ২০১৮ সালে ৩৮টি হত্যাকাণ্ড হয়। 

৩০টি খুনের ঘটনার সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড ছিল দুটি। একটি সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম হত্যাকাণ্ড। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুন হন তিনি। আরেকটি রায়পুর উপজেলার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন হত্যাকাণ্ড। পাওনা টাকা আনতে গিয়ে খুন তিনি। এ দুটি হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া ডাকাতের হাতে দুজন গৃহকর্তা, মায়ের হাতে শিশু, ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই, স্বামীর হাতে তিন নারী এবং ডাকাতি ও চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে খুন হন দুজন। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পর্যবেক্ষণ ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক বছরে সদরে আট, চন্দ্রগঞ্জে সাত, রায়পুরে পাঁচ, কমলনগরে চার, রামগঞ্জে তিন ও রামগতিতে তিনজন খুন হয়েছেন। 

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রিয়াজুল কবির বলেন, হত্যার সব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অধিকাংশ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর পুলিশের হাতে আসামি ধরা পড়ে। আদালতে হস্তান্তর করা হয়। বিচারও চলছে। কিন্তু এরপরও অপরাধ কমছে না।

থানা সূত্রে জানায়, গত ২১ আগস্ট রায়পুর পৌর শহরের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন (৪০) খুন হন। সুপারি বিক্রির ছয় লাখ টাকা আনতে গেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গলা কেটে খুন করা হয় তাঁকে। সদর উপজেলার কাজির দিঘীরপাড় বাজার এলাকার একটি ডোবা থেকে তাঁর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত আলমগীর হোসেনের ছোট ভাই মো. হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।

 গত ২৮ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খোরশেদ আলমকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই দিন আলাদাতপুরের একটি চায়ের দোকানে এ ঘটনা ঘটে। মুখোশধারী পাঁচজন সন্ত্রাসী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে এসে তাঁকে গুলি করে। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তিনি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। 

গত ১ এপ্রিল ডাকাতের গুলিতে মোসলেহ উদ্দিন (৪২) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় একই পরিবারের আরও তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে। পরে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল লুটে নেয় ডাকাতেরা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের ঝাউডগি গ্রামের পাটোয়ারি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে ছোট ভাই আবদুল মান্নানের হাতে বড় ভাই আবদুল হান্নান (২৫) খুন হয়েছেন। গত ২০ এপ্রিল পার্বতীনগর ইউনিয়নের আঠিয়া বাজার এলাকা এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আবদুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, একটি জেলাতে ৩০টি হত্যার ঘটনা অস্বাভাবিক। বিষয়টি সমাজের জন্য উদ্বেগজনক। সামাজিক অস্থিরতা থেকে এসব অপরাধ সৃষ্টি হয়েছে। আর কর্মহীন থাকার কারণে কিছু মানুষ হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য কাজে জড়িয়ে পড়ে। এ অপরাধগুলো আইনের মাধ্যমে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। যথাসময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।