মাটি ছাড়া শাকসবজি চাষ

>
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠা লেটুস পাতা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ৬ জানুয়ারি।  প্রথম আলো
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠা লেটুস পাতা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ৬ জানুয়ারি। প্রথম আলো
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম কেন্দ্র মাটি ছাড়া এই চাষাবাদে সাফল্য পেয়েছে, যা হাইড্রোপনিক পদ্ধতি নামে পরিচিত।

লোহার পাত দিয়ে তৈরি দুটি লম্বা কাঠামোর ওপর সারি সারি সবুজ লেটুসগাছ। এর পাশে টমেটো, ক্যাপসিকাম ও স্ট্রবেরির গাছও বেশ পরিপক্ব হয়েছে। কয় দিন পর ফল ধরবে। পরিচর্যায় নিয়োজিত একজন কর্মী সবুজ লেটুস পাতা মূলসহ তুলে নিচ্ছেন। কিন্তু মূলে কোনো মাটির চিহ্ন নেই। মাটি ছাড়া কেবল পানিতে জন্মাচ্ছে এই গাছ।

পানির পাশাপাশি অন্য সারিতে নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়োতে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম কেন্দ্র মাটি ছাড়া এই চাষাবাদে সাফল্য পেয়েছে, যা হাইড্রোপনিক পদ্ধতি নামে পরিচিত। কয়েক দিন আগে থেকে পানিতে তৈরি লেটুস পাতা তোলা শুরু হয়েছে। ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, টমেটোগাছও বেশ বড় হয়েছে। চট্টগ্রামে এই গবেষণার পুরো কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরের সবজি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম হারুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হচ্ছে। গাজীপুরেও একই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয়েছে। এই প্রথম চট্টগ্রাম গবেষণা ইনস্টিটিউটে এ পদ্ধতি অনুসরণ করে সফল হয়েছে। জনবহুল দেশে বাড়ির ছাদে কম জায়গার মধ্যে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।

সরেজমিনে চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে দেখা যায়, একটি বাঁশ ও জালের ঘেরা দেওয়া জায়গায় দুটি লোহার কাঠামো করা টেবিলে পাশাপাশি মাটি ছাড়া চাষাবাদ চলছে। এক সারিতে পানির লম্বা পাত্রের ওপর কর্কশিট দিয়ে ভাসমান অবস্থায় বিভিন্ন গাছের চারা এবং বড় গাছ রাখা হয়েছে। স্বচ্ছ পানির মধ্যে গাছগুলোর মূল দেখা যাচ্ছে। একটি পানির পাম্প দিয়ে দিনে দুবার মাটির বিভিন্ন উপাদানমিশ্রিত পানি আদানপ্রদান (রিসাইকেল) করা হয়। অন্যদিকে আরেকটি সারিতে মাটির পরিবর্তে নারকেলের ছোবড়ার মধ্যে একই ধরনের সবজি চাষ করা হয়। নারকেলের ছোবড়ার সারিটির প্রতিটি গাছের পাশে পাম্প দিয়ে মাটির উপাদানমিশ্রিত পানি দেওয়া হয়।

ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. গোলাম আজম প্রথম আলোকে বলেন, মাটির বিভিন্ন উপাদান খনিজ, জৈব ইত্যাদি পানিতে মিশিয়ে তা পাত্রে রাখা হয়। এরপর সেখানে গাছের চারা পুঁতে দেওয়া হয়। কর্কশিট দিয়ে আটকানো থাকে, যাতে হেলে না পড়ে। মোটরের মাধ্যমে পানি রিসাইকেল করা হয়। উপাদানগুলোও ঘুরতে থাকে। আর নারকেলের ছোবড়ার মধ্যে গুঁজে দেওয়া চারায়ও মাটির উপাদানমিশ্রিত পানি দেওয়া হয়।

পোকামাকড়ের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায় এই চাষের এলাকা। জাল থাকলে কীটনাশক দেওয়া লাগে না। ঘরের বারান্দা, বসার ঘরে পানির বালতিতেও এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। লেটুস পাতা ২৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। এ ছাড়া টমেটো, স্ট্রবেরি ও ক্যাপসিকাম দুই–আড়াই মাসের মধ্যে ফল দেয়। একই পদ্ধতিতে গোলাপ, ফুলকপি, করলা, ব্রোকলি, শসা, শিম ইত্যাদি চাষ করা যায়।

তবে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ বলে জানান প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাটির উপাদানগুলো কিনতে হয়। এ ছাড়া পাম্প কেনায় খরচ রয়েছে। তবু শহরের অনেক বাগানমালিক আমাদের কাছে এসে এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চায়। কারণ, শহরে জায়গা কম।’

নগরের অনেক ছাদবাগানি হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ ইতিমধ্যে শুরুও করেছেন। একই কাঠামোর মধ্যে দু–একটি তাক করেও এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। তবে সূর্যালোক লাগে। পলিথিন দিয়ে ঘেরা থাকলে পোকামাকড়ের সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করা যায় বলে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান।