ক্যাসিনো-কাণ্ড: গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলমান শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমসহ (জিকে শামীম) অন্যদের ঠিকাদারি কাজে অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এমনটা করা হয়। আজ বুধবার সকাল থেকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাঁরা হলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন, আবদুল মোমেন চৌধুরী ও নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা।

নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, মোহাম্মদ ফজলুল হক, আবদুল কাদের চৌধুরি, মো. আফসার উদ্দিনকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা আছে। নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস আহমেদ, ফজলুল হক ও উপসহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর সরকারকে তলব করা হয়েছে ২৩ ডিসেম্বর।

তাদের সবার বিরুদ্ধে জি কে শামীমের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ আছে। তাদের ঘুষ দিয়ে শামীম গণপূর্তের বড় কাজগুলো বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। একই অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান মুন্সী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে।

চলমান ‘শুদ্ধি অভিযান’ এর প্রথম থেকে দুদক অবৈধ সম্পদের যে অনুসন্ধান শুরু করেছে, তার অংশ হিসেবে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে সংস্থাটি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানের (মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজীব।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িতদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ইতিমধ্যে ১৮টি মামলা করে দুদক দল।