এনামুল-রূপনকে গ্রেপ্তার দেখাতে দুদকের আবেদন

ক্যাসিনো কারবারি দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। ছবি: প্রথম আলো
ক্যাসিনো কারবারি দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। ছবি: প্রথম আলো

গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এবং তাঁর ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়াকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে (শ্যোন অ্যারেস্ট) আদালতে গেছে সংস্থাটি। আজ সোমবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ আবেদন করা হয়।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় দুই ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চলার সময় থেকে চার মাস পলাতক থাকার পর আজ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে গ্রেপ্তার হন দুই ভাই। সিআইডি তাঁদের গ্রেপ্তারের পরপরই আদালতে আবেদন করেছে দুদক। দুদক সূত্র জানিয়েছে, দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতের আদেশ নিয়ে তাঁদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সংস্থাটি।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক।

এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। এই মামলায় এনামুলসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলা এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁকে অবৈধ অর্থ অর্জনে সহায়তা করেছেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনামুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হারুন অর রশিদ। তাই এই তিনজনকে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, এনামুলের আয়কর নথি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাঁর বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। তিনি ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ উপায়ে আয় করা অর্থ দিয়ে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব তাঁর আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তিনি অবৈধ আয়ের মাধ্যমে দেশে–বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য আছে। সেসব তথ্য মামলার তদন্তকালে আইন-আমলে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অনুসন্ধান দল।

অন্যদিকে, এনামুলের ভাই রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন দুদকের আরেক সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। মামলার এজাহারে বলা হয়, রূপন ভূঁইয়া অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নামে-বেনামে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, রূপন ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত তাঁর আয়কর রিটার্নে কোনো স্থাবর সম্পদের তথ্য দেননি। ব্যবসার পুঁজি বাবদ ২ কোটি ৬২ লাখ ২৮ হাজার ৮৫২ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ৮, লাখ ৬ হাজার ৯১১ টাকার অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যবসার পুঁজি এবং এনু–রূপন স্টিল করপোরেশনের শেয়ার বাবদ প্রদর্শিত মোট ২ কোটি ৭১ লাখ ৮২ হাজার ৪৮১ টাকা অর্জনের সপক্ষে কোনো বৈধ আয়ের উৎস দেখাননি। এটা তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে অর্জিত সম্পদ।

অনুসন্ধানের সময় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দুদক দেখেছে, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৫টি অ্যাকাউন্টে তাঁর ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯৭ হাজার ১০১ টাকা জমা আছে। এই টাকার তথ্যও তিনি আয়কর রিটার্নে দেখাননি। এ টাকারও কোনো বৈধ উৎস নেই।

এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে রূপনের বাসা থেকে নগদ ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং ৫ হাজার ১৬৩ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই সম্পদেরও বৈধ উৎস পায়নি দুদক।

সব মিলিয়ে রূপনের ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এজাহারে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানের সময় বিভিন্ন গোপন সূত্রে দুদক জেনেছে, রূপন ভূঁইয়া তাঁর অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে একাধিক প্লট, বাড়ি ও ফ্ল্যাট অর্জন করাসহ দেশে-বিদেশে নামে–বেনামে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ক্ষেত্রে মামলার তদন্তের সময় ওই সব তথ্য পাওয়া গেলে তা আইন–আমলে নেওয়া হবে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক ও তাঁর ভাই রূপন ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে টাকা ও গয়না জব্দ করার পর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনামুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হারুন অর রশিদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, চার কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে র‍্যাব।

অভিযান শেষে র‍্যাব জানিয়েছিল, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে ক্যাসিনোর টাকা এনে এনামুল বাসায় রাখতেন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ টাকা রাখার জায়গাও হতো না। তাই টাকা দিয়ে তিনি স্বর্ণালংকার কিনতেন।

ওই সব ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতটি মামলা হয়েছে। সূত্রাপুর থানায় মানি লন্ডারিং ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি করে চারটি মামলা করে র‍্যাব। ওয়ারী থানায় দুটি অস্ত্র আইনে এবং গেন্ডারিয়ার থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়।

ওয়ারী থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় বলা হয়, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে র‍্যাব জানতে পারে, ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের অবৈধ ক্যাসিনোর অংশীদার এনামুল হকের অর্থ বিশ্বস্ত কর্মচারী আবুল কালাম ও হারুন অর রশিদের বাসায় আছে। র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা, আগ্নেয়াস্ত্র ও টাকা উদ্ধার করে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় দুই ভাইকে আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: