র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করেন ডিবির এসআই

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাঁকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।

ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম সৈয়দ মো. রাশেদুল আলম (৩৮)। তিনি ঢাকা মহানগর ডিবির উত্তর বিভাগে এসআই পদে কর্মরত। তাঁর গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূঁইঘর গ্রামে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করার অভিযোগের মামলায় এর আগে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রত্যেকে ঢাকার আদালতে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের দেওয়া জবানবন্দি এবং তথ্যপ্রযুক্তির অনুসন্ধানে ওই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডিবির এসআই সৈয়দ রাশেদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৫ ডিসেম্বর র‍্যাব-১০–এর পরিচয়ে পিস্তল ঠেকিয়ে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার টিপু সুলতান রোডে শফিউল আলম আজাদসহ তিনজনকে গাড়িতে ওঠান অজ্ঞাত আসামিরা। তাঁদের কাছে নগদ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকাসহ মোবাইল ফোনে কেড়ে নেন। এ ঘটনায় গত ১৮ ডিসেম্বর শফিউল আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করেন। এখন পর্যন্ত এই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ওয়ারী থানার পুলিশ।

আসামিরা হলেন এসআই সৈয়দ রাশেদুল আলম, সাগর, রাজীব, রাসেল, রিপন গাজী ও মুক্তার হোসেন।

পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার সৈয়দ রাশেদুল আলমকে আজ ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ওয়ারী থানার পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, ডাকাতির ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হলেন এসআই সৈয়দ রাশেদুল আলম। ডাকাতি করার এক লাখ টাকা আসামির বাসার আলমারি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, যা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। এর আগে যে পাঁচজন আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাঁরা আসামি রাশেদুল আলমের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, জবানবন্দি দেওয়া পাঁচজনের একজন সাগর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত।

ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে মামলার বাদী শফিউল আলম বলেন, তিনি ওয়ারীর ভজহরি সাহা স্ট্রিটের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। গত ৫ ডিসেম্বর মাদারীপুরে যাওয়ার জন্য সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে বাসা থেকে বের হন। সঙ্গে ছিল তাঁর বন্ধু সিয়াম উদ্দিন ও ভাগনে মাহমুদুল হাসান এবং সাড়ে ৫ লাখ টাকা। ওয়ারীর টিপু সুলতান সড়কের ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি দোকানের সামনে পাঁচ থেকে ছয়জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি একটি মাইক্রোবাসে করে এসে নিজেদের র‍্যাব-১০–এর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। তাঁদের মধ্যে একজন ব্যক্তি সাদা কাগজ দেখান বাদী শফিউলকে। সেই কাগজে লেখা ছিল একটি মোবাইল ফোন নম্বর। অজ্ঞাত সেই লোক তাঁকে জানান, কাগজে যাঁর ফোন নম্বর লেখা তাঁকে ধরতে হবে। তখন লোকটি তাঁর মোবাইল ফোনে বাদী শফিউলের ছবি দেখান।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, অপরিচিত ওই ব্যক্তিরা অস্ত্রের মুখে তাঁদের মাইক্রোবাসে উঠতে বাধ্য করেন। বাদীকে বসতে দেওয়া হয় গাড়িচালকের ঠিক পেছনে। তাঁর সঙ্গে বসা ছিল দুই ব্যক্তি। আর মাইক্রোবাসের একেবার পেছনে সিয়াম ও মুন্নাকে বসায়। চালকের পাশে যে ব্যক্তি বসে ছিলেন, গাড়িতে থাকা অন্যরা তাঁকে স্যার বলে সম্বোধন করছিলেন। তাঁর কাছে পিস্তল, হাতকড়া ও ওয়াকিটকি ছিল। গাড়িতে ওঠানোর পর তাঁদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ডেমরা এলাকার দিকে। সেখানে ঘোরাঘুরি করার পর তাঁদের দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া সড়কে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের হাত-পা, চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার ছনবাড়ী এলাকায়। রাত ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে তাঁদের ঢাকা-মাওয়া সড়ক এলাকার একটি নির্জন স্থানে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। বাদী শফিউলের কাছে থাকা নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা, মোবাইল ফোন, ব্যাংকের এটিএম কার্ড, বাদীর বন্ধু সিয়াম ও ভাগনে মাহমুদুলের মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়।

মামলার বাদী শফিউল আলম বলেন, নামিয়ে দেওয়ার পর তাঁরা জানতে পারেন, ডাকাতরা মুন্সিগঞ্জের নিমতলা এলাকায় নামিয়ে দেয়। ডাকাতদের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে ছিল।

ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা মাইক্রোবাস হাজারীবাগ এলাকার রায়েরবাজার থেকে জব্দ করেছে ওয়ারী থানার পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা।