দুপচাঁচিয়া পৌর নির্বাচনে জয়ী বিএনপির জাহাঙ্গীর, জামানত হারিয়েছেন আ.লীগের এনামুল

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন হয়েছে।

ধানের শীষ প্রতীকে জাহাঙ্গীর আলম তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১ হাজার ১৪ ভোট বেশি পান। তিনি ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৫৬। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বেলাল হোসেন জগ প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪২ ভোট। আর নৌকার প্রার্থী এনামুল হক ১ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এ ছাড়া জামানত খুইয়েছেন মুঠোফোন প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আহম্মেদ আলী । তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৩৩৪ । সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এই নির্বাচনে ১৬ হাজার ৭৬৩ ভোটের মধ্যে ১৩ হাজার ৬৯১ ভোট পড়েছে। ভোট পড়ার শতকরা হার ৮১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বাতিল হয়েছে ৩০টি ভোট। রাত আটটায় নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নির্বাচনে ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৯ জন প্রার্থী এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে আবু বক্কর সিদ্দিক (পানির বোতল), ২ নম্বর ওয়ার্ডে আকরাম হোসেন (ডালিম), ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুস সালাম (উটপাখি), ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইউনুস আলী মহলদার (পাঞ্জাবি), ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এসএম কায়কোবাদ (উটপাখি), ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহিদুল ইসলাম (পাঞ্জাবি), ৭ নম্বরে আশরাফুজ্জামান সাগর (উটপাখি), ৮ নম্বরে রেজানুর তালুকদার (উটপাখি) এবং ৯ নম্বরে ইদরিস আলী (উটপাখি) বেসরকারিভাবে কাউন্সিলর পদে বিজয় হয়েছেন। সংরক্ষিত মহিলা ১ নম্বর ওয়ার্ডে নিপা বেগম (চশমা), ২ নম্বর ওয়ার্ডে জাহানারা বেগম (জবা ফুল) এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শিল্পী খাতুন (চশমা) বেসরকারিভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচনে সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রে রেকর্ড ভোটারের উপস্থিতি ছিল। প্রতিটি কেন্দ্রে নারী ভোটারের ছিল দীর্ঘ সারি।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ডিমশহর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার চ্যাঙ্গা মহল্লার আশরাফ আলী (৬৫)। তিনি বলেন, ‘কম্পিউটারত সুইচ টিপে ক্যাংকা করে ভোট দিমো সেডা লিয়ে ভয় আচলো। ভোট দিবার পারমো কীনা সেডাও সংশয়ত আচনো। কিন্তু ভোট দিবার পর বুঝনো, কম্পিউটারত সুইচ টিপে ভোট দেওয়া খুব সহজ।’

একই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা তালুকদার পাড়া মহল্লার আবদুল জলিল তালুকদার (৫৫) বলেন, ‘অন্যবার ব্যালটত মার্কা দেখে সিল মারে ভোট দিচ্চিনো। এবার ব্যালট নাই। সুইচ টিপে ভোট দিনো। মার্কা দেকেই সুইচ টিপনো, ভোটটা কুনটি গেল বুঝবার পারিচ্চি না।’

ডিমশহর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাতসকালে ভোট দিতে এসেছিলেন ফকিরপাড়া মহল্লার আলেয়া বেগম (৪৫)। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে এই নারী ভোটার বলেন, ‘বিয়ানবেলা বাড়ির সগলিক লিয়ে ভোট দিবার আচ্চি। সুইচ টিপে ক্যাংবা করে ভোট দিমো বুঝবার পারিচ্চিনা।’

সিও অফিস এলাকার ভোটার আবদুস সাত্তার (৪৩) বলেন, ‘কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশ। কোনো গ্যাঞ্জাম নাই। ইংকা ভালো ভোট কোনো দিন দেকিনি।’

ভূমি কার্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা সন্ধ্যা রানী পোদ্দার (৮৫) বলেন, ‘জীবনে প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিনো। সময় বেশি লাগচে। তবে ডিজিটাল ভোট দিতে খুব ভালো লাগিচে।’

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে আসা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন ভোটার নোবেল মাহমুদ (২৪) বলেন, ‘নতুন ভোটার হলেও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। জীবনের প্রথম ভোট দিলাম ইভিএম মেশিনে। ডিজিটাল বাংলাদেশে জন্ম সার্থক হলো।’

ডিমশহর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর ভোটার আবদুস সালাম বলেন, ‘২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনত বিয়ানবেলা ভোট দিবার কেন্দ্রত আসা শুনি, ভোট দেওয়া লাগবি না, দিনের ভোট রাতেই হামার পক্ষ থ্যাকে পুলিশ আর ভোট কর্তা ব্যালট কাটে বাক্সত ভরাচে। এবারও ভোট দিবার পারমো কীনা সেডা লিয়ে ভয় লাগিচ্চিল। শ্যাষম্যাস কম্পিউটারত সুইচ টিপে ভোট দিবার পারনো। লিজের ভোট লিজে দিতে পারে খুব ভালো লাগিচ্চে।’

দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম জাকির হোসেন বলেন, দুপচাঁচিয়া পৌরসভা নির্বাচন নজিরবিহীন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকে কেন্দ্রে নারী ভোটারের দীর্ঘ সারি ছিল। ইভিএমএ ভোট দিতে পেরে খুশি ভোটারেরা।