ডিপি ওয়ার্ল্ডকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে বাংলাদেশে জ্বালানি খাতের পাশাপাশি বন্দর, জাহাজ নির্মাণ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে (আইসিটি) বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম সোমবার আবুধাবিতে শাংগ্রি-লা হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতি এ আহ্বান জানান।
একই দিন এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (ইএনওসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ হুমাইদ আল ফালাসি ও আমিরাতের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডের পৃথক প্রতিনিধিদল যার নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম, আমিরাত জাতীয় তেল কোম্পানির (ইএনওসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ হুমাইদ আল ফালাসি এবং দ্বুাই শাসক পরিবারের সদস্য শেখ আহমেদ ডালমুখ আল মকতুম এম এ কে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একইসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের একটি দলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান।
বৈঠকে ডিপি ওয়ার্ল্ড-বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সাপ্লাই চেন সলিউশন, কার্গো লজিস্টিক্স, বন্দর পরিচালনা, সমুদ্র যাত্রা সংশ্লিষ্ট সংস্থা- প্রধানমন্ত্রীকে সোনাগাজীতে ১৩শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করেন। বাংলাদেশ সরকার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীদের বিশেষ করে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে বাংলাদেশে একটি হাইটেক পার্ক স্থাপনের আহ্বান জানান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের আইসিটি খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘আউটসোর্সিং’ সরবরাহকারী দেশ।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমিরাতের জাতীয় তেল কোম্পানী (ইএনওসি) এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পিএমও সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জ্বল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আবুধাবি সাসটেইনেবিলিটি উইক’ ও ‘জায়েদ সাসটেইনেবিলিটি প্রাইজ’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারের (এডিএনইসি) আইসিসি হলে আবুধাবি সাসটেইনেবিলিটি উইক (এডিএসডব্লিউ) ২০২০ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে পৌঁছালে আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান তাঁকে স্বাগত জানান।
আট দিনব্যাপী ‘এডিএসডব্লিউ ২০২০’–এর এ সম্মেলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক, শিল্প বিশেষজ্ঞ, অগ্রণী প্রযুক্তিবিদ ও পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সাসটেইনেবিলিটি এ সম্মেলন চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ বছর এডিএসডব্লিউর প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কমিউনিটি অ্যান্ড ইয়ুথ’ এবং এর ছয়টি প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানি ও খাদ্য, চলাচলের ভবিষ্যৎ, মহাকাশ, স্বাস্থ্যে বায়োটেকনোলজি ও কল্যাণের জন্য প্রযুক্তি।
এদিকে এ বছর পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন দেশের ১০টি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জায়েদ সাসটেইনেবল প্রাইজ’ প্রদান করা হয়। এ পুরস্কার ওই সব প্রতিষ্ঠান ও হাইস্কুলকে স্বীকৃতি দেয় ও পুরস্কৃত করে, যেগুলো কার্যকরভাবে পরিচালিত, উদ্ভাবনীমূলক ও টেকসই সমাধানে প্রেরণা প্রদান করে। পাঁচটি ক্যাটাগরির এ পুরস্কার হচ্ছে স্বাস্থ্য, খাদ্য, জ্বালানি, পানি, গ্লোবাল হাইস্কুল। অনুষ্ঠানে শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ও শেখ হাসিনা ছাড়া আরও সাতটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিরিবাতির ইউতান তারাওয়া ইয়েতা জুনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের প্রতিনিধির হাতে পুরস্কার তুলে দেন। স্কুলটি গ্লোবাল হাইস্কুল ক্যাটাগরিতে মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার পেয়েছে।
শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার ইউএইর প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এবং আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল–নাহিয়ান ও ইউএইর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্টের স্ত্রী শেখ ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের সরকারি সফরে গত রোববার রাতে আবুধাবি এসে পৌঁছান। আজ মঙ্গলবার রাতে তাঁর দেশে ফেরার কথা।