পরোপকারী একজন হেলাল উদ্দিন

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আদর্শ কৃষক হেলাল উদ্দিন ২৫ বছর ধরে বাজার পরিষ্কার করছেন নিজ হাতে ঝাড়ু দিয়ে। ছবিতে মহেশ্বরচাঁদা বাজার পরিষ্কার করতে দেখা যাচ্ছে।  ছবি: প্রথম আলো
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আদর্শ কৃষক হেলাল উদ্দিন ২৫ বছর ধরে বাজার পরিষ্কার করছেন নিজ হাতে ঝাড়ু দিয়ে। ছবিতে মহেশ্বরচাঁদা বাজার পরিষ্কার করতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

ভোর হলেই ঝাড়ু হাতে বেরিয়ে পড়েন হেলাল উদ্দিন। প্রথমে মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এরপর শুরু হয় বাজার ঝাড়ু দেওয়ার কাজ। ১৯৯৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি এই ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। মহেশ্বরচাঁদা নামের ছোট বাজারটি তাই প্রায়ই থাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, হেলাল উদ্দিন বাড়িতে আছেন, না কোথাও বেড়াতে গেছেন, তা বোঝা যায় বাজারটি দেখার পর। বাজার পরিষ্কার থাকলে তাঁরা বুঝতে পারেন হেলাল বাড়িতে আছেন, আর অপরিষ্কার থাকলে তাঁর বুঝতে পারেন তিনি বাইরে বেড়াতে গেছেন। বিনা পারিশ্রমিকে তিনি বাজার পরিষ্কারের কাজটি করেন। বাজার ঝাড়ু দেওয়ার জন্য তাঁকে কেউ এক কাপ চা পান করতে বললেও তিনি খান না। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন। 

জানা গেছে, হেলাল উদ্দিনের বয়স এখন ৭১। যে বয়সে বিশ্রাম করে সময় কাটানোর কথা, সেই বয়সে তিনি মানুষের জন্য কাজ করছেন। তাঁর বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রাম। কৃষিকাজ করে সংসার চালান তিনি। স্ত্রী মাহিরন নেছা আর চার মেয়ে, তিন ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার।

হেলাল উদ্দিন বলেন, দরিদ্র পরিবারে তাঁদের জন্ম। তাঁরা তিন ভাই, এক বোন। বাবার ৭০ শতক জমি ছিল। ওই জমিতে ঠিকমতো চাষাবাদ হতো না। বড় ভাই দেলবার আলী ১৯৭১ সালে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। আরেক ভাই খেলাফত আলী ক্যানসারে মারা যান। 

হেলাল উদ্দিন বলেন, সংসারে অভাব থাকায় পড়ালেখা ছেড়ে ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মাঠের কাজে যেতে হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। কৃষিকাজ করেই বর্তমানে তাঁর সংসার ভালোই চলছে।

বাজার পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার কারণ জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁদের গ্রাম কালীগঞ্জের মহেশ্বরচাঁদায় কৃষি ক্লাব প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ওই বছরই ওঠে বাজার। যার নাম মহেশ্বরচাঁদা বাজার। যে বছর বাজার প্রতিষ্ঠা হয়, ওই বছরই তিনি নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি জনগণের সেবা করতে নানা কাজের সঙ্গে বাজার পরিষ্কার করাও শুরু করেন। সেই থেকে প্রতিদিন ভোরে তিনি বাজারটি পরিষ্কার করেন। বাড়ি থেকে ঝাঁটা নিয়ে ভোরে বের হন, এরপর ফজরের নামাজ আদায় করেন। তারপর ঝাড়ু দেওয়ার কাজ শুরু করেন। 

ওই বাজারের পাশের বাসিন্দা আবদুল সালেক জানান, কৃষক হেলাল উদ্দিন তাঁদের এলাকার সবার প্রিয় একজন মানুষ। তিনি এলাকার মানুষকে নানা ভালো কাজের পথ দেখিয়েছেন। বাজারের দোকানদার আবদুল আজিজ জানান, কৃষক হেলাল উদ্দিনের কারণে তাঁরা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন বাজার পেয়েছেন। হেলাল আসলে মানুষের কল্যাণেই সব সময় কাজ করে থাকেন।

এ বিষয়ে নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনি লস্কর জানান, হেলাল উদ্দিন নিয়মিত বাজার ঝাড়ু দেওয়া ছাড়া আরও অনেক কাজ তিনি মানুষের কল্যাণে করে যাচ্ছেন। তাঁর এই প্রশংসনীয় কাজ অন্যদের উদ্বুদ্ধ করবে।