হঠাৎ পানির কালচে রং ধারণ, মরছে মাছ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে রং ধারণ করেছে। সম্প্রতি নবাবগঞ্জ সেতুর ওপর থেকে তোলা।  প্রথম আলো
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে রং ধারণ করেছে। সম্প্রতি নবাবগঞ্জ সেতুর ওপর থেকে তোলা। প্রথম আলো

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের সোনামুখী সেতু থেকে দক্ষিণে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে রং ধারণ করেছে। পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে সেচকাজ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ১৫ দিন আগেও তাঁরা এই নদীর পানি ব্যবহার করতে পারতেন। তাঁদের অভিযোগ, জয়পুরহাট চিনিকলে আখমাড়াই শুরু হয়েছে। এই চিনিকলের বর্জ্যে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়েছে। 

তবে জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনোয়ার হোসেন আকন্দ এমন অভিযোগ সরাসরি স্বীকার করেননি। তিনি বলছেন, যাচাই–বাছাই না করে নদীদূষণের জন্য চিনিকলকে দায়ী করা ঠিক হবে না। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, আক্কেলপুর পৌর শহরের সোনামুখী সেতুর দক্ষিণ পাশের অংশে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে রং ধারণ করেছে। শ্রী খালের পানি তুলসীগঙ্গা নদীর ওই স্থানে এসে মিলিত হয়েছে। সোনামুখী সেতুর উত্তর থেকে দক্ষিণে পানির স্রোত। সেতুর উত্তরে তুলসীগঙ্গা নদীর পানির পরিমাণ ভালোই। নদীর ওপর নির্মিত সোনামুখী সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে হলহলিয়া রেলসেতু পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার নদীপথের পানি কালচে হয়ে রয়েছে। 

নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, জয়পুরহাট চিনিকলে আখমাড়াই কার্যক্রম চলছে। চিনিকলের বর্জ্যে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়েছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে তাঁরা কোনো কাজেই নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। নদীর মাছও মরে যাচ্ছে। নদীর পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর আগেও চিনিকলের বর্জ্যে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়েছিল। চকবিজলী গ্রামের কৃষক আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘নদীর পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিতাম। নদীর পানি কালচে হওয়ায় জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।’ 

আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগেও তুলসীগঙ্গা নদীর পানি ভালো ছিল। নদীপাড় এলাকার বিপুলসংখ্যক কৃষক তুলসীগঙ্গা নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহার করতেন। জয়পুরহাট চিনিকলের পানিতে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নদীর পানিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের নদীর এই দূষিত পানি সেচকাজে ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। 

 আক্কেলপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম বলেন, তুলসীগঙ্গা নদীর পানির অবস্থা খুবই খারাপ। এই পানিতে শুধু মাছ নয়, সাপ, পোকামাকড় কিছুই বাঁচতে পারবে না। এ বিষয়ে তাঁরা জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু চিনিকল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্বীকার করেনি। 

জয়পুরহাট চিনিকলের এমডি আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, চিনিকলের বর্জ্য নিজস্ব পুকুরে ফেলা হয়। এরপর পুকুর থেকে নালা দিয়ে পানি তুলসীগঙ্গা নদীতে চলে যায়। চিনিকলের পানিতে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়েছে, তা যাচাইয়ের আগে বলা সঠিক হবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জয়পুরহাট চিনিকলে ইটিপি স্থাপনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।