তিন চাকার যানবাহন চলছেই

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চলছে তিন চাকার গাড়ি। প্রায় ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। গতকাল দুপুরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় এলাকায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের পাশাপাশি চলছে ঘোড়ার গাড়িও।  প্রথম আলো
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চলছে তিন চাকার গাড়ি। প্রায় ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। গতকাল দুপুরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় এলাকায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের পাশাপাশি চলছে ঘোড়ার গাড়িও। প্রথম আলো

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ অঞ্চলে অবৈধভাবে চলাচল করছে তিন চাকার যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে হাইওয়ে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। 

গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করছে। বিপরীত দিকে রাজধানী ছেড়ে আসা গাড়ি চলাচল করছে। আর পাল্লা দিয়ে ছুটছে তিন চাকার বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। আছে নছিমন, করিমন, ভটভটি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান এমনকি ঘোড়ার গাড়ি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৫ সাল থেকে দেশের ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপর হাইকোর্ট গত বছর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ১০ জেলার মহাসড়কে তিন চাকার বাহন না চালানোর নির্দেশ দেন। এরপর গত বছরের আগস্ট থেকে তিন চাকার যান নিষিদ্ধ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে।

গতকাল গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলার বিষয়ে অভিযোগ করেন সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, গত রোববার চর খানখানাপুর এলাকায় ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে যাত্রীবাহী মাহেন্দ্রের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়েসহ পাঁচজন নিহত হয়। সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান শহিদুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়ে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ধরনের তিন চাকার যানবাহনের মহাসড়কে চলাচল অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। না হলে অকালে আরও অনেক মানুষের প্রাণ যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাহেন্দ্রচালক বলেন, ‘নিষেধের বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে যাই। এ ছাড়া আমরা অনেকটা পুলিশদের ম্যানেজ করেই গাড়ি চালাই। তা না হলে কি মহাসড়কে গাড়ি চালানো যায়?’

ঢাকা থেকে বরিশালগামী একটি দূরপাল্লার বাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জসিম বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যানবাহনের কোনো কমতি নেই। যে কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। 

একটি ব্যক্তিগত গাড়ির চালক রুশু গাজী বলেন, মহাসড়কে বর্তমানে উন্নয়নকাজ চলছে। পিচঢালাইয়ের কারণে মূল মহাসড়ক থেকে পাশের ইটের সলিং বা শোল্ডার থেকে সড়ক অনেক উঁচু হয়ে গেছে। যে কারণে সড়ক থেকে কোনো ছোট বা তিন চাকার গাড়ির চাকা পাশে পড়ে গেলে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনতিবিলম্বে সড়কের সঙ্গে পাশের ইটের সলিংয়ের স্তর সমান করা দরকার।

মহাসড়ক দিয়ে এসব তিন চাকার গাড়ির চলাচল বন্ধে নিয়মিত তদারকির কথা হাইওয়ে পুলিশের। এ বিষয়ে গোয়ালন্দ মোড় আহ্লাদিপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, গোয়ালন্দ ঘাট থেকে গোয়ালন্দ মোড় পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে অনেক পকেট রাস্তা রয়েছে। যে কারণে চিপাচাপা দিয়ে এসব গাড়ি মহাসড়কে উঠে চলাচল করে। আর পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে চলাচলের অভিযোগ সত্য নয়। তাঁরা তিন চাকার গাড়ি দেখলেই সরিয়ে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত বলেন, মহাসড়ক দিয়ে নছিমন-করিমন, ভটভটি চলাচল নিষিদ্ধ। মাহেন্দ্রের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নন। উপজেলা প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হবে।