কোথাও মৃদু, কোথাও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। নীলফামারীতে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে জনজীবন জবুথবু হয়ে পড়েছে। শীতে কষ্ট পাচ্ছেন গরিব মানুষেরা। খেটে খাওয়া মানুষেরা দুর্ভোগে পড়েছেন বেশি।

গতকাল সোমবার সকাল নয়টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যা ছয়টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার সকাল নয়টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সন্ধ্যা ছয়টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, কোথাও ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করলে হয় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।

গতকাল ঘন কুয়াশার কারণে পঞ্চগড়ের সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছেন। সকাল ১০টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাসে রোদ তীব্রতা ছড়াতে পারেনি।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে সরাসরি হিম বায়ু আসায় পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে কখনো মৃদু, কখনো মাঝারি আবার কখনো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শৈত্যপ্রবাহ মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে।

নীলফামারীতেও গতকাল থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। কাঁপানো শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা তেমন কমেনি। বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে ভারী যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে ও বড় মাঠে বসা গরম কাপড়ের দোকানগুলোয় ক্রেতার ভিড় লক্ষ করা গেছে।

কষ্টে জেলেপাড়ার মানুষ

ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার নদীর পাড়ের জেলেপাড়া গ্রামের তিন শতাধিক দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষ। উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে যমুনেশ্বরী নদীর তীরের এ গ্রামে ৭০টি পরিবারের বাস। এখানকার পাঁচ–ছয়টি পরিবার ছাড়া সবাই ভূমিহীন।

ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, জেলেপাড়ার মানুষ সবাই গরিব। তীব্র ঠান্ডায় তাঁদের অবস্থা করুণ। তাঁরা ত্রাণ চান না, গরম কাপড় চান।

গ্রামটির কয়েকজন জানান, শীতে নদী থেকে উঠে আসা ঠান্ডা বাতাস তাঁদের কষ্টের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেখানে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি।

জয়ন্তী বালা (৬০) বলেন, ‘রাইতোত হিড়হিড় করি ভাঙা ঘরোত নদীর বাতাস ঢোকে। মরণ ঠান্ডা। মাটির হিয়াল ওঠে। খেড়কুটা বিছি ক্যাতা আর চটের বস্তা গাওত দিয়া থাকি। তাও ঠান্ডা যায় না।’

গতকাল সকালে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। অনেকের পরনে গরম কাপড় নেই।

কানন বালা (৫৫) বললেন, ‘এই ঠান্ডাত আগুন না থাকলে হামরা মরি গেইনো হয়।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল মমিন বলেন, সরকারিভাবে যে দুই হাজার ৯০০টি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে, তা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। আরও কম্বলের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন প্রতিনিধি, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও তারাগঞ্জ, রংপুর]