ঢাকায় ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক, মামলা ৫০০

ঢাকায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালে ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানা এলাকায় ধর্ষণ ও গণধর্ষণের অভিযোগে প্রায় ৫০০ (৪৯৮) মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের মামলার সংখ্যা ৩৭টি। পরিস্থিতি অনুযায়ী ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক। রাত–বিরেতে নারীর নিরাপত্তা নেই।

এসব ঘটনা তদন্ত করে ইতিমধ্যে ঢাকার আদালতে ৪০২টি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) সাধারণ নিবন্ধন খাতা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

গত বছর সংঘটিত ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ৪৪টি মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক নারী রাতের বেলা ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পুলিশ এসব ঘটনায় জড়িত বেশির ভাগ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রাজধানীর শেওড়া এলাকায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মজনু নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় গণধর্ষণের মামলা হয় ৮৫৬টি। এ সময়ে ধর্ষণের মামলা হয় ৪ হাজার ৫৮৫টি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ঢাকায় করা মামলার মধ্যে বেশির ভাগই ধর্ষণসংক্রান্ত।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণ-গণধর্ষণের ঘটনা কমানোর জন্য সমাজে নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের সাজা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা মহানগরে গণধর্ষণের যত ঘটনা
গত বছর ঢাকা মহানগর এলাকায় ৩৭টি গণধর্ষণের ঘটনার মধ্যে ১৪টি মামলার কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে প্রথম আলো।

গত বছরের ৭ মে রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় ২২ বছর বয়সী এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হন। বাসের মধ্যে চারজনে মিলে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক শাহিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি তদন্ত করে ইতিমধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, ওই তরুণীকে আসামিরা ধর্ষণ করেন। আসামিদের সবাই পরিবহনশ্রমিক। এর মধ্যে একজন চালকও আছেন।

২১ বছর বয়সী আরেক তরুণী গত বছরের ২৩ আগস্ট ঢাকার গাবতলী বাসটার্মিনালের বাথরুমের ভেতর গণধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনার দুই দিনের মাথায় পুলিশ ওই মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার আদালতে পাঠায়। তাঁদের বিরুদ্ধেও ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

১৯ বছর বয়সী তরুণী একজন পোশাকশ্রমিক। থাকেন রাজধানীর শাহ আলী থানা এলাকায়। কাজ শেষে সেদিন (গত বছরের ২৫ আগস্ট) রাত ১০টায় দিয়াবাড়ি মোড় হয়ে বেড়িবাঁধ দিয়ে তাঁর বাসায় ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে যখন তিনি রয়েল সিটি ১ নম্বর গেটের সামনে আসেন, তখন চার যুবক তাঁকে আটকান। সেখান থেকে তুলে নিয়ে নদীর ধারে নিয়ে চারজন মিলে তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে শাহ আলী থানা-পুলিশ। তাঁরা এখন কারাগারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগরে ধর্ষণ-গণধর্ষণের ঘটনার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা বলছেন। ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের অভিযোগে থানা ও আদালতে মামলা হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনা ঢাকায় কমছে না।

ধর্ষণের শিকার এক নারীর বয়স ৩৫ বছর। থাকেন রাজধানীর বাড্ডা এলাকায়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে বাসায় ফেরার পথে বাড্ডার পাঁচখোলা সেতুর কাছে চারজন ব্যক্তি তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে বাড্ডা থানা-পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, বাড্ডার মাকান সিটির গেটে ওই নারী পৌঁছানোর পর আসামি অলি উল্লাহ, ফনির হোসেনসহ অন্যরা জোরপূর্বক তাঁকে ধরে পাশের বাগানের ভেতর নিয়ে যান এবং ধর্ষণ করেন। আসামিদের স্বভাব চরিত্র খারাপ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ বেড়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা দায়ের থেকে শুরু করে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত সবার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককেই বিচারের আওতায় এনে সাজা নিশ্চিত করতে হবে।