এক শিক্ষকেই চলছে বিদ্যালয়

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ধুলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খেলছে শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই এই বিদ্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ধুলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খেলছে শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই এই বিদ্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

সময় তখন দুপুর ১২ টা। প্রথম পালার পাঠদান শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পালার পাঠদান শুরু হবে কিছুক্ষণ পরই। রুবেল, ইব্রাহিম, ওমর ফারুকসহ পঞ্চম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত। ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফিরবে শ্রেণিকক্ষে। কিন্তু যে শ্রেণিকক্ষে তারা ফিরবে, সেখানে হয়তো যাবেন না শিক্ষক। তিনটি শ্রেণির জন্য সেখানে আছেন মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক। যিনি আবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন।

এই চিত্র নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ধুলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সম্প্রতি সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক–সংকটের এই চিত্র চোখে পড়ে। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একতলার দুটি পাকা ভবন। বাইরে থেকে দেখতে ভবন দুটি চোখে পড়ার মতো। ভবনের শ্রেণিকক্ষগুলো সাজানো গোছানো। অভাব একটাই—সেটি শিক্ষকের। শিক্ষকের পাঁচটি পদের বিপরীতে আছেন একজন। তাঁর নাম মো. লুৎফুর রহমান, যিনি ১০ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

কথা হয় লুৎফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭ সালের মার্চ থেকেই বিদ্যালয়টি চলছিল তিনিসহ মাত্র দুজন সহকারী শিক্ষক দিয়ে। দুই শিক্ষকের একজন সাজেদা আক্তার দেড় বছরের ডিপিএড প্রশিক্ষণে গেছেন গত ডিসেম্বরে। এরপর চলতি মাসে একজন শিক্ষককে অন্য বিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে প্রেষণে দেওয়া হলেও স্থায়ী শিক্ষক তিনি একাই।

লুৎফুর রহমান জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই তাঁকে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। শিক্ষক না থাকায় অভিভাবকেরা সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চান না।

একসময় এই বিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই শ ছাত্রছাত্রী থাকলেও শিক্ষক–সংকটের কারণে কমতে কমতে এখন প্রায় ১০০ জনে ঠেকেছে। অনেক অভিভাবকই ছাড়পত্র নিয়ে যাচ্ছেন।

>

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ধুলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ী শিক্ষক একজন
পাঠদান ব্যাহত

লুৎফুর রহমান বলেন, তিনি নিজের চেষ্টায় খণ্ডকালীন দুজন অতিথি শিক্ষক রেখে পাঠদানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। স্থানীয় উদ্যোগে তাঁদের সামান্য কিছু সম্মানী দেওয়া হয়। তাঁদের প্রচেষ্টার ফলে ২৬ শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে।

ওমর ফারুক, মো. রুবেল, ইব্রাহিমসহ পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষক না থাকায় তাদের ঠিকমতো ক্লাস হয় না। অনেক সময় তারা নিজেরা ক্লাসে বসে পড়েন। নতুন শিক্ষক দেওয়া হলে তাদের লেখাপড়া আরও ভালো হতো।

একই উপজেলার আনন্দীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শিক্ষক আছেন দুজন। এর মধ্যে একজন গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে চাকরি করছেন। অন্যজন জান্নাতুল ফেরদাউস আছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে।

এ বিদ্যালয়েও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০২। জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক ছিলেন তিনিসহ তিনজন। এর মধ্যে কয়েক দিন আগে একজন চলে গেছেন দেড় বছরের ডিপিএড প্রশিক্ষণে। প্রধান শিক্ষক নেই ২০১২ সাল থেকে।

বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আবদুস ছাত্তার অভিযোগ করেন, সুসজ্জিত ভবন, শ্রেণিকক্ষ, আসবাব—সবই আছে। নতুন করে ‘ওয়াশ ব্লক’ হচ্ছে। কিন্তু নেই কেবল শিক্ষক। শিক্ষক না থাকায় ঠিকমতো ক্লাস হয় না। পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে আছেন মাত্র দুজন। এর মধ্যে একজন অসুস্থ। কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক–সংকট রয়েছে, এর একটি তালিকা সম্প্রতি তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্য থেকে ওই সব বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. সুলতান মিয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এ রকম হওয়ার কথা নয়। কেন একজন শিক্ষক দিয়ে স্কুল চলছে, খোঁজ নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।