চুরির অভিযোগে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৪ জন কারাগারে

শিশু রাফিকুলকে যখন মারধর করা হচ্ছিল, তখন আশআশে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছিল গ্রামের লোকজন। ছবি: সংগৃহীত
শিশু রাফিকুলকে যখন মারধর করা হচ্ছিল, তখন আশআশে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছিল গ্রামের লোকজন। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গরু চুরির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে শিশু রাফিকুল ইসলামকে (১৩) নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে করাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ জন আসামি আজ মঙ্গলবার সুন্দরগঞ্জ আমলি আদালতে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রমেশ কুমার চারজনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আর বাকি নয়জনের জামিন মঞ্জুর করেন। ওই আদালতের পুলিশ পরিদর্শক বেলাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

যাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তাঁরা হলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধুমাইটারি গ্রামের ইয়াজল হোসেন, নাজমুল হক, আইজল হক ও ফজলু মিয়া। আর জামিনপ্রাপ্তরা হলেন তনু প্রামাণিক, তুহিন প্রামাণিক, তাজু প্রামাণিক, সাবু প্রামাণিক, লেলিন প্রামাণিক, মুসা প্রামাণিক, রানা মিয়া, ফজল মিয়া ও রহমত আলী।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার শিশু রাফিকুল ইসলাম গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের ধুমাইটারি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। সে ধুমাইটারি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধুমাইটারি গ্রামের নজরুল ইসলামের একটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় একই রাতে রাফিকুলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই গ্রামের ফজলু মিয়া, ইয়াজল ও নাজমুল নামের তিন ব্যক্তি তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। গরু চুরির অভিযোগে রাফিকুলকে সারা রাত ফজলু মিয়ার বাড়িতে বেঁধে রাখা হয়। পরদিন সকাল নয়টায় রাফিকুলকে একই গ্রামের আফসার প্রামাণিকের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সবার সামনে তার হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়। একপর্যায়ে রাফিকুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এই ঘটনার ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সবার নজরে আসে এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, গত শনিবার দুপুরে ১২টার দিকে রাফিকুলকে তার পরিবারের লোকজন এখানে ভর্তি করান। তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের একাধিক চিহ্ন আছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ধুমাইটারি গ্রামের তনু প্রামাণিক, তাজু প্রামাণিক, তুহিন প্রামাণিক, লেলিন প্রামাণিক, সাবু প্রামাণিক, মুসা প্রামাণিকসহ অনেকে রাফিকুলকে পর্যায়ক্রমে উল্টো করে ধরে মারধর করেন। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শিশু রাফিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত রোববার রাতে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় ধুমাইটারি সিদ্দিকীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক তনু প্রামাণিককে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহহিল জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।