তীব্র শীতে বৃদ্ধাকে স্টেশনে রেখে পালিয়ে গেল স্বজনেরা

ছবি: ইউএনবি
ছবি: ইউএনবি

হাড়–কাঁপানো শীতের মধ্যে এক বৃদ্ধাকে রেলস্টেশনে রেখে পালিয়ে গেছে তাঁর স্বজনেরা। প্ল্যাটফর্মে ১৪ দিন থাকার পর গত রোববার রাতে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে কিছুটা সুস্থ হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসকেরা।

এই ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে।

রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘ওই দিন স্টেশনে আমার দোকানে বসে ছিলাম। দেখলাম কয়েজন রিকশাভ্যানে নিয়ে এসে বৃদ্ধ নারীকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের একটি জায়গায় রেখে দিল। কৌতূহলী হয়ে আমি তাদের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে শুরু হয় বৃষ্টি। দীর্ঘক্ষণ পরও তারা ফিরে না আসায় আমি স্টেশনের তেঁতুলগাছের নিচে পরিত্যক্ত জায়গাটিতে খড় বিছিয়ে দিই। এরপর পুরোনো কম্বল দিয়ে বিছানা তৈরি করে তাঁকে সেখানে রাখি। আমি গরিব মানুষ, তারপরও এই কয়দিন তাঁকে যথাসাধ্য সেবাযত্ন করার চেষ্টা করেছি। এভাবে গত দুই সপ্তাহ তিনি এখানেই ছিলেন।’

এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় প্রশাসন বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ হলেও শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

ছবি: ইউএনবি
ছবি: ইউএনবি

গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সালাউদ্দীন জানান, রোববার রাতে যখন তাকে এখানে আনা হয়, তখন প্রচণ্ড শীত এবং বার্ধক্যের কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তিনি বলেন, ‘ভাইটাল সাইন যেমন বিপি পালস্ খুব কম ছিল। চিকিৎসার পর সকালে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো তিনি শঙ্কামুক্ত নন। তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে যতক্ষণ তিনি এখানে আছেন, আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেব।’

অমানবিক এমন ঘটনার খবর পেয়ে এই বৃদ্ধার সেবাযত্নে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, চিকিৎসকসহ স্থানীয় জনপ্রশাসন এগিয়ে এসেছে।

ছবি: ইউএনবি
ছবি: ইউএনবি

রহনপুর পৌর মেয়র তারেক আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই অমানবিক। রাতে বিষয়টি শোনার পরই হাসপাতালে ছুটে এসেছি। তিনি আমার মায়ের মতোই, তাই তাঁকে ফেলে যেতে পারিনি। যত দিন এই অসহায় বৃদ্ধ মায়ের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া যাচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, একজন সন্তানের মতোই তাঁর পাশে থাকব।’

রহনপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে মালতি বেগম নামের এক নারীকে ওই বৃদ্ধাকে দেখভালের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে মালতি বেগম বৃদ্ধাকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছেন।

মালতি বেগম জানান, যখনই ওই বৃদ্ধা চেতনা ফিরে পাচ্ছেন, তখনই স্বজনদের প্রতি একরাশ ঘৃণা প্রকাশ করছেন। হাতের ইশারায় দূরে সরে যেতে বলছেন।