সিটি নির্বাচনের উত্তাপ সংসদে

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতীয় সংসদে। মঙ্গলবার অনির্ধারিত আলোচনায় এই ভোট নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে। এর জের ধরে জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াক আউট করে বিএনপি।

অনির্ধারিত আলোচনায় বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় একটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়েছে। সেখানে একজন বিদ্রোহীসহ বিএনপির দুজন এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী ছিলেন। এতে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগের নৌকা ৩ নম্বর রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে কোথাও কোনো গন্ডগোল হয়নি। এতে ৬০ শতাংশের বেশ ভোট পড়েছে। একই দিনে চট্টগ্রাম ৮ আসনে উপনির্বাচন হয়েছে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। সেখানে ভোটের আগের দিন রাতে প্রত্যেক কেন্দ্রের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। সকাল বেলায় ভোট কেন্দ্রে সরকারি দলের লাঠিসোঁটা নিয়ে তাণ্ডব হয়।

হারুনুর বলেন, ‘সামনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচন কী আসলেই নির্বাচন হবে? এতে কী জনগণ ভোট দিতে পারবে? এই নির্বাচনের পরিবেশ কী সরকার নিশ্চিত করতে পারবে? এই বিষয়ে দায়িত্বশীলদের থেকে উত্তর পেতে চাই।

এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা এবং নির্বাচনকে নিয়ে যে সহিংসতা চলছে তা বন্ধের দাবি করছি। না করলে আমরা সংসদ থেকে ওয়াক-আউট করব।’

হারুনুর বলেন, ‘নির্বাচন কী আসলে হবে নাকি নির্বাচনের নামে এভাবে প্রহসন চলতে থাকবে তার জবাব চাই। আমাদের নির্বাচনী মিছিল থেকে লোক ধরে বলা হবে ছিনতাইকারী, দেওয়া হবে গায়েবি মামলা। এটা কদিন চলবে?’

হারুনুর রশীদ বলেন,‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মন্ত্রী-এমপিরা প্রচারে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এই আইন আপনারা করেছেন। আপনারা আইন করে আপনারাই তা লঙ্ঘন করছেন। সিনিয়র এমপি মন্ত্রীরা যদি পুলিশ প্রশাসনকে কিছু বলেন তার বাইরে কী তারা যেতে পারেন? অসম্ভব।’

হারুনুর রশীদের বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবেন না। তবে, তাঁরা মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন।

বিএনপির হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকার প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ বিএনপি নির্বাচনে না জেতে ততক্ষণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না। হারুনুর রশীদের বক্তব্যেও তা প্রমাণ হয়েছে।

তোফায়েল বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচন শুরুর আগে থেকেই বিএনপি বলা শুরু করেছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

সংসদ সদস্যদের প্রচারের বিষয়ে তোফায়েল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে গেলে তারা স্বীকার করেছেন এমপিদের বিষয়টি। কমিশন চেষ্টা করেছিলেন এটা অ্যামেন্ড করতে কিন্তু পারেননি। আমরা কমিশনকে বলেছি আমরা এটা পরিবর্তন করতে আসিনি। আমরা সরকারি দল। এটা করতে গেলে আমাদের ওপর মানুষের একটি বিরূপ ধারণা হবে।’

তোফায়েল বলেন, সাংসদেরা সরকারি সুবিধাভোগী নন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কি গুরুত্বপূর্ণ নন।

তোফায়েল বলেন, সবকিছুতেই বিএনপির নেগেটিভ (নেতিবাচক) দৃষ্টিভঙ্গি। যেটা আমরা করি সেটাতেই তাদের বিরোধিতা। এ জন্য আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম বিএনপি মানে এটা হতে পারে বাংলাদেশ নেগেটিভ পার্টি।’

তোফায়েল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সিটি করপোরেশনে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান।

সরকারি দলের সাংসদ আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপির সব সময় নেগেটিভ নির্বাচন ও নেগেটিভ পলিটিকস করে আসছে। তারা ক্ষমতায় আসার জন্য অন্য পথ অবলম্বনের চেষ্টা করে। নির্বাচন বিমুখতা তা প্রমাণ করেছে। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজনৈতিক অপশক্তির ওপর আশ্রয় করে। রাজনীতি বিরোধী হিসেবেই তাদের জন্ম।

তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমুর বক্তব্যের পর সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন বিএনপির সাংসদেরা।