দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তাঁরা

ব্যাডমিন্টন কোচ নিখিল চন্দ্র ধর ও ফিফা রেফারি বিটুরাজ বড়ুয়া
ব্যাডমিন্টন কোচ নিখিল চন্দ্র ধর ও ফিফা রেফারি বিটুরাজ বড়ুয়া

একজন কাতার জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের প্রশিক্ষক। আরেকজন আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফার রেফারি। দুজনের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভায়। দেশ ছাড়িয়ে আজ তাঁরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁদের এই অর্জন খুব সহজে হয়নি। এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্য তাঁদের এনে দিয়েছে এই সাফল্য। ক্রীড়াঙ্গনের দুই কৃতী মানুষ এখানেই থেমে নেই। দুজনেরই রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরির প্রশিক্ষণ একাডেমি। 

বাঁশখালী উপজেলা থেকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে স্বীকৃতি লাভ করা একজন হলেন বাঁশখালী পৌরসভার বণিকপাড়ার নিখিল চন্দ্র ধর। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কাতার জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি ব্যাডমিন্টনের আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্যাডমিন্টন এশিয়ার উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ছিলেন। 

আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে স্বীকৃতি লাভ করা আরেকজন হলেন বাঁশখালী পৌরসভা বড়ুয়াপাড়ার বিটুরাজ বড়ুয়া। তিনি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি মাসে পেয়েছেন ফিফা রেফারির স্বীকৃতি। তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ পরিচালনার করার অভিজ্ঞতা। 

হার না মানা নিখিল

শৈশবে বাড়ির উঠোনে পাড়ার বড় ভাইদের ব্যাডমিন্টন খেলা দেখেই ব্যাডমিন্টনের প্রতি আগ্রহ জন্মে নিখিল চন্দ্র ধরের। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলতেন ব্যাডমিন্টন। একপর্যায়ে ১৯৯৫ সালে জাতীয় সাব-জুনিয়র দ্বৈত খেলায় চ্যাম্পিয়ন হন। তখন থেকেই ইচ্ছা জন্মে ব্যাডমিন্টন জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করার। ১৯৯৮ সালে জাতীয় জুনিয়র দ্বৈতে রানারআপ হয়েছিলেন। ওই সময় পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় আর খেলোয়াড় হওয়া হয়নি। তবুও হাল ছাড়েননি। মনোযোগী হন ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষক হওয়ার সাধনায়। 

২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাডমিন্টন আম্পায়ার হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালের শুরুর দিকে গঠন করেন ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণ একাডেমি টিম-নিখিল। বর্তমানে চট্টগ্রামের রাইফেলস ক্লাবে এটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার বিখ্যাত লুই ব্যাডমিন্টন একাডেমির প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। অনেক বাধা পেরিয়ে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্যাডমিন্টন এশিয়ার আঞ্চলিক ব্যাডমিন্টন উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন নিখিল। এ পদ পেতে সেখানে তাঁকে কয়েক বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। দক্ষতার পরিচয় দেওয়ায় তাঁকে নিয়োগ দেয় ব্যাডমিন্টন এশিয়া। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশ্বের শ খানেক ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষককে পেছনে ফেলে যোগ দেন কাতার জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলে। এখন তিনি দুই বছর মেয়াদে কাতারের ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। 

নিখিল চন্দ্র ধর বলেন, ‘এতটুকু আসতে অনেক বাধা পার হতে হয়েছে। বাধাকে শক্তিতে রূপান্তর করে এগিয়েছি। ইউরোপ-উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর ব্যাডমিন্টন কোচ হওয়ার ইচ্ছা আছে। সে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’ 

নিখিলের ব্যাডমিন্টন অভিজ্ঞতার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা শারীরিক শিক্ষা কলেজের প্রভাষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, মালদ্বীপে একটি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে রেফারি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিখিলদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এরপর তিনি কাতার জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের প্রশিক্ষক হতে পরীক্ষা দেন। এখন কাতার জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। 

ফিফার বিটুরাজের কথা

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আলাদা ঝোঁক ছিল বিটুরাজ বড়ুয়ার। একসময় ফুটবল রেফারি হওয়ার ইচ্ছা চাপে তাঁর মাথায়। সে উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের জুন মাসে তৎকালীন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের অধীনে শেষ করেন তৃতীয় শ্রেণি ফুটবল রেফারি প্রশিক্ষণ। 

২০১২ সালে ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে অর্জন করেন দ্বিতীয় শ্রেণির ফুটবল রেফারির সনদ। ২০১৩ সালের মে মাসে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা এএফসির (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন) অধীনে একটি ফুটবল রেফারি প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেন। এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে অর্জন করেন প্রথম শ্রেণির ফুটবল রেফারির সনদ।

২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা এএফসির অধীনে চার বছর মেয়াদের আরও একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণটিতে অংশ নিতে তিন মাস পরপর তাঁকে মালয়েশিয়ায় যেতে হচ্ছে। প্রশিক্ষণটি শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষা মিলিয়ে মোট ১৬টি অংশে বিভক্ত। ৯টি অংশে বিটুরাজ উত্তীর্ণ হয়েছেন। প্রশিক্ষণটি এখনো চলমান রয়েছে। 

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে অর্জন করেন প্রথম শ্রেণির ফুটবল রেফারির সনদ। ফুটবলের আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিফার রেফারি সনদ পেতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শারীরিক পরীক্ষা দেন বিটুরাজ। 

এ বছরের জানুয়ারিতে বিটুরাজ অর্জন করেন ফিফা রেফারির সনদ। ফিফা রেফারি হওয়ায় তিনি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ফুটবল খেলা পরিচালনা করার সুযোগ পাবেন বিটুরাজ। প্রতিবছর শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে ফিফা রেফারি সনদ হালনাগাদ করতে হয়। বিটুরাজ বাঁশখালী ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষকও। 

বিটুরাজ বড়ুয়া বলেন, ‘অনেক পরিশ্রম আর ধৈর্য দিয়ে এতটুকু এসেছি। সামনে এলিট ফিফা রেফারি হওয়ার ইচ্ছা আছে। এলিট ফিফা রেফারি হচ্ছে ফিফার আরও একটি ওপরের ধাপ। এ জন্য শরীর ঠিক রাখতে প্রতিদিন অনুশীলন করতে হচ্ছে।’

বিটুরাজের ফিফা রেফারি হওয়ার বিষয়ে সাবেক ফিফা রেফারি ও চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিজেএফআরএ) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মিরণ বলেন, এ বছর ফিফা রেফারি হয়েছেন বিটুরাজ। তিনি সিজেএফআরএর সদস্য।