কারা চিকিৎসক: দুই মন্ত্রণালয়ের 'বিবাদ'

>স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে ২০ চিকিৎসককে কারাগারে ন্যস্ত করা হয়। এর মধ্যে চারজন যোগদান করেছেন, বাকিরা করেননি।

চিকিৎসকদের কারাগারে যোগদানের বিষয়ে আদালত ও জনপ্রশাসনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিথ্যা তথ্য দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সঠিক তথ্য না দেওয়ায় হতবাক হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে চিকিৎসকদের কারাগারে বদলির পরও কেন তাঁরা কারা চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেননি, তা রাষ্ট্রের
কাছে জানতে চেয়েছিলেন আদালত। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্রসচিব (সুরক্ষা বিভাগ), কারা মহাপরিদর্শক, জনপ্রশাসনসচিব, আইনসচিব ও সমাজকল্যাণসচিবকে বিবাদী করা হয়।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এ বিষয়ে সুরক্ষা বিভাগসহ সুপ্রিম কোর্ট ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে দেওয়া চিঠিতে জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে ২০ জন চিকিৎসককে ন্যস্ত করা হয়। এর মধ্যে মাত্র চারজন যোগদান করেছেন এবং বাকিরা না করায় কারা হাসপাতালের পদ শূন্য রয়েছে—বিষয়টি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বা অধিদপ্তর জানত না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি তাদের জানায়নি। যথাসময়ে বিষয়টি তাদের জানানো হলে তারা দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন এবং অন্য চিকিৎসকদের ন্যস্ত করতে পারতেন।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এ চিঠি পেয়ে হতবাক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। তারা বিস্ময় প্রকাশ করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সঠিক তথ্য আদালতকে দেয়নি। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মোট ২৪টি পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে আধা সরকারি পত্রও। কেন বিষয়টি অস্বীকার করা হলো, তা জানতে চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই চিঠির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ২৪টি চিঠি ও স্মারক নম্বর যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, সারা দেশে ৬৮টি কারাগার এবং একটি ২০০ শয্যা হাসপাতালের জন্য কারা হাসপাতালের ১৪১ জন চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে। ১৪১ পদের বিপরীতে বর্তমানে আটজন সহকারী সার্জন এবং একজন কনসালট্যান্টসহ মোট ৯ জন চিকিৎসক কর্মরত। বাকি পদগুলো শূন্য। গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৪০ হাজার ৬৬৪ জন ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দী রয়েছেন ৮৯ হাজার ৯১০ জন।

গত ২৩ জুন এক আদেশে আদালত সারা দেশের সব কারাগারে ধারণক্ষমতা, বন্দী ও চিকিৎসকের সংখ্যা এবং চিকিৎসকের শূন্য পদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন। ওই নির্দেশ অনুসারে কারা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে প্রেষণে বদলির মাধ্যমে কারা চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। তাই সরাসরি বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ নেই। এদিকে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ২০ জন চিকিৎসককে কারাগারে পদায়ন করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ৪ জন যোগদান করেন। বাকি ১৬ জন এখনো যোগদান করেননি।

দেশের কারাগারগুলোতে এই নয়জন চিকিৎসকই সেবা দিচ্ছেন প্রায় ৯০ হাজার বন্দীকে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বন্দী যক্ষ্মা, টাইফয়েড, কিডনি, লিভার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত এবং তাঁদের ধারাবাহিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কারা হাসপাতালে প্রতিদিন বন্দীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া নিশ্চিত করা কারা কর্তৃপক্ষের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় সেই দায়িত্ব তারা পালন করতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আমরা চিঠি দিয়েছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসক পদায়নও করেছে। কিন্তু এখন কীভাবে বলছে, তারা জানে না। আমি হতবাক!’

কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাড়ে ১০ হাজার বন্দীর জন্য দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। এর বিপরীতে ৩২টি পদ সৃজন করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে কর্মরত আছেন মাত্র একজন।