প্রবেশপথে বাস ধোয়ামোছা

সিলেট রেল স্টেশনের প্রবেশ মুখে যত্রত্রভাবে বাস পার্কিং করে চলে ধোয়ামোছার কাজ। এ কারণে সেখানে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হয়। গত শনিবার সকালে।  ছবি: প্রথম আলো
সিলেট রেল স্টেশনের প্রবেশ মুখে যত্রত্রভাবে বাস পার্কিং করে চলে ধোয়ামোছার কাজ। এ কারণে সেখানে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হয়। গত শনিবার সকালে। ছবি: প্রথম আলো

সকাল আটটা। সিলেট রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে যাত্রীবাহী যানবাহনের জটলা। একটু সামনে এগিয়ে দেখা গেল, রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে দুটি বাস রেখে চলছে ধোয়ামোছার কাজ। এতে যান চলাচলের পথ সরু হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যাতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রেলস্টেশনে আসা যাত্রীরা।

গত শনিবার এই চিত্র দেখা গেছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা রেলস্টেশনের প্রবেশপথে। স্থানীয়রা বলছেন, এই দুর্ভোগ প্রতিদিনের। স্টেশনে প্রবেশমুখে যানজট থাকার কারণে অনেক সময় যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের আগে স্টেশন এলাকায় পৌঁছালেও প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করার আগেই ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সিলেট রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে দক্ষিণ সুরমার কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ জন্য টার্মিনালের কিছু বাস রেলস্টেশনের খালি জায়গায় রাখার অনুরোধ করেন সিলেট সিটি করপোরেশন ও নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁদের অনুরোধে স্টেশন কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে বাস রাখার অনুমতি দেয়। স্টেশন এলাকার অভ্যন্তরে খালি জায়গায় বাস রাখার অনুমতি দেওয়া হলেও প্রবেশমুখের বিষয়ে বলা হয়নি। এখন প্রতিদিনই সকাল থেকে এক-দুটি বাস রাখা হয় স্টেশনের প্রবেশমুখে। সেখানেই চলে বাস ধোয়ামোছার কাজ। স্টেশনের প্রবেশমুখ ছাড়াও সড়কের পাশেই যত্রতত্র বাস রাখায় কিনব্রিজ থেকে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর পর্যন্ত দিনভর যানজট লেগে থাকে। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া সড়কের পাশে বাস রাখায় ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীর সংখ্যায় প্রভাব পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মূল সড়ক থেকে সিলেট রেলস্টেশনে প্রবেশ ও বের হওয়ার দুটি রাস্তা। প্রবেশমুখের রাস্তাটি বড় যানবাহনের যাতায়াত বন্ধ করতে খুঁটি দিয়ে রাখা হয়েছে। স্টেশন থেকে বাইরের সড়কটির অর্ধেক অংশও খুঁটি দিয়ে সরু করা হয়েছে। প্রবেশমুখে চলে বাস ধোয়ামোছার কাজও। অন্যদিকে বাইরের রাস্তার অর্ধেক অংশজুড়ে করা হয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। গতকাল সকালে স্টেশনের প্রবেশমুখে সিলেট-জগন্নাথপুর সড়কে চলাচল করা একটি বাস রেখে ধোয়ামোছার কাজ চলছিল। এতে সড়কটিতে পানি পড়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। প্রবেশমুখে বাস রাখায় স্টেশন থেকে বের হওয়ার সড়কটি প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য ব্যবহার করছেন যাত্রীরা।

রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে বাস ধোয়ামোছার কাজ করা বাসের সহকারী এই প্রতিবেদককে বলেন, আগে টার্মিনালে এসব কাজ করা হতো। এখন টার্মিনাল নেই। নির্মাণকাজ চলছে। সড়কেও অনেক বাস রাখা হয়। সে জন্য এখানেই ধোয়ামোছা করতে হয়। টার্মিনাল নির্মাণ হয়ে গেলে স্টেশনে বাস রাখা হতো না।

রেলস্টেশনে আসা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায়ই ট্রেনে যাতায়াত করি। বেশ কিছুদিন ধরে সিলেট স্টেশনে আসার সময় দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে। যানজটের মূল কারণ স্টেশনের প্রবেশমুখে রাখা বাসগুলো। যানজটের কবলে পড়ে একবার প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাতে পারিনি। রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।’

বাসচালক আশিক মিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজের জন্যই সাময়িকভাবে রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে বাস রেখে ধোয়ামোছার কাজ করা হচ্ছে। নগরের অন্য কোথাও বাসগুলো রাখার স্থান না থাকায় সড়কের পাশেই রাখতে হয়।

সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন এবং সিলেট মহানগর পুলিশের কর্মকর্তাদের অনুরোধেই স্টেশনের অভ্যন্তরের খালি জায়গায় বাস রাখার মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রবেশমুখে বাস রেখে যানজট এবং যাত্রী দুর্ভোগ হওয়ার বিষয়টি মহানগর পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) নিকুলিন চাকমা বলেন, ‘সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ চলায় এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না। তারপরও যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি আমরা দূর করার চেষ্টা করব। রেলস্টেশনের প্রবেশমুখ থেকে বাস সরিয়ে নেওয়া হবে।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ কিছুটা ধীরগতিতে হচ্ছে। যদিও এ প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত রয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।