ফরিদপুরে বেড়েছে ধর্ষণ ও নির্যাতন

ফরিদপুরে ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংরক্ষিত নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৬৬টি। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫১ এবং ২০১৭ সালে ছিল ৪২। অর্থাৎ তিন বছর ধরে ফরিদপুরে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে।
এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে ফরিদপুরের সচেতন নাগরিকদের। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মৃধা বলেন, ‘সামাজিক অবক্ষয় এবং পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুশাসন না মানার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকাসক্ত। পাশাপাশি অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে চলে গেছে মুঠোফোন।’
থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছর প্রতিবন্ধী শিশু ফাতেমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর বিকেলে শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠের ব্র্যান্ডিং মেলা থেকে নিখোঁজ হয় ফতেমা (১৩)। ১৩ ডিসেম্বর তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায় মেলার মাঠ থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার দূরে শহরের দক্ষিণ কালীবাড়ি মহল্লায়।
ফতেমাকে ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৫ ডিসেম্বর শহরের ওয়্যারলেস পাড়া এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ইয়াছিন মিয়া (২৫) নামের এক তরুণকে। ওই রাতেই শহরের পূর্বখাবাসপুর এলাকার জোড়া সেতুর কাছে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইয়াছিন। পুলিশ দাবি করে, আলামত উদ্ধারের জন্য ওই জায়গায় ইয়াছিনকে নিয়ে গেলে তিনি পুলিশের হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে গুলি করা হয়।
একই সঙ্গে বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। ২০১৯ সালে মোট নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৭৫টি। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৪৪ এবং ২০১৭ সালে ছিল ১৫১। গত বছর শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩০টি। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯ ও ২০১৭ সালে ১১।
এমনকি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিরাপদ নেই শিশুরা। গত ৪ নভেম্বর একটি বিদ্যালয়ের ছাত্রকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে দুই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের আবদুর সিকদারের ডাঙ্গী গ্রামে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া মারকাজুল উলুম (মাদ্রাসা ও এতিমখানা)–এর মক্তব শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুর রহমান (৮) মারা যায়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় আবদুর রহমানের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যার মামলা করেন। পরে পুলিশ ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে।
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, বিনোদন ও খেলাধুলার অভাবের কারণে শিশুদের সঠিক মানসিক বিকাশ ঘটছে না। পাশাপাশি বিচারহীনতার ও বিচার বিলম্ব হওয়াটাও একটি সমস্যা। প্রত্যাশিত সময়ে প্রত্যাশিত বিচার হচ্ছে না, ফলে অপরাধ বাড়ছে সমাজে।
জেলা পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, ‘শুধু ফরিদপুরে নয়, সারা দেশেই এ প্রবণতা বেড়েছে। আমরা এ প্রবণতা কমিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব বলে মনে করি।’