কাটল জনতা, বাঁধল প্রশাসন
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় প্রশাসন ও পুলিশের লোকজনের সামনেই আশুড়ার বিলের মধ্য দিয়ে নির্মাণ করা আড়াআড়ি বাঁধ কেটে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। পরে প্রশাসন শ্রমিক নিয়োগ করে বাঁধটি মেরামত করেছে। এ ঘটনায় ২০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচ শ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচ প্রকল্পের অধীনে বাঁধটি তৈরি করা হয়। এটির নির্মাণ বন্ধের দাবিতে গত ৫ আগস্ট গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের পাঁচ শতাধিক লোক মানববন্ধন করেন। এর কিছুদিন আগে তাঁরা একই দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, আশুড়ার বিলের মধ্য দিয়ে সম্প্রতি আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। গত সোমবার রাতে হরিপুর এলাকার কিছু লোক বাঁধের উত্তর দিকে দুটি জায়গায় কেটে ফেলেন। খবর পেয়ে গতকাল সকাল ৯টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) প্রশাসন ও পুলিশের লোকজন সেখানে যান। তাঁরা স্থানীয় শ্রমিকদের সহায়তায় বাঁধ মেরামত করেন। বেলা একটার দিকে হরিপুর এলাকার পাঁচ শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র হাতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে বাঁধের দিকে আসতে থাকেন। তাঁরা প্রশাসনের লোকজনের সামনেই বাঁধ আবার কেটে ফেলেন। ইউএনওসহ প্রশাসন ও পুলিশের লোকজন এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। পরে পাশের বিরামপুর উপজেলা ও দিনাজপুর পুলিশ লাইনস থেকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা এলে গ্রামবাসী চলে যান। বিকেলে শ্রমিক দিয়ে আবার বাঁধ মেরামত করা হয়।
ইউএনও মোছা. নাজমুন নাহার বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ না করার বিষয়ে এলাকাবাসী আপত্তি তুলে অভিযোগ দিয়েছিল বলে শুনেছি। আমি সদ্য এখানে যোগ দিয়েছি। আমার সাথে কোনো যোগাযোগ না করে প্রথমে রাতের অন্ধকারে পরে এমনকি আমার উপস্থিতিতে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, এই বাঁধ কাটার পেছনে স্থানীয় সাংসদ শিবলী সাদিকের হাত রয়েছে। সম্প্রতি নবাবগঞ্জ বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়েছে। আশুড়ার বিলকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ কারণে সাংসদের ব্যক্তিগত পর্যটন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে পর্যটক কমে গেছে। তাঁর মদদে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী এলাকার কিছু লোকের যোগসাজশে বাঁধটি কেটে ফেলেছেন। এ ঘটনার ভিডিও চিত্র আছে। তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সাংসদ শিবলী সাদিক বলেন, ‘আশুড়ার বিলে কাঠের সেতু ও আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করে এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে আমি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। নিজে উদ্বোধন করেছি। যদি ভেঙেই ফেলব তাহলে গড়লাম কেন? উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এ ধরনের মিথ্যা ভিত্তিহীন কথা ছড়াচ্ছেন।’
এলাকাবাসীর দাবি, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা এই এলাকায় বাস করছেন। তাঁদের অধিকাংশই কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও জামালপুরসহ বিভিন্ন নদীভাঙনকবলিত এলাকা থেকে এসে এখানে বসতি গড়েছেন। শুষ্ক মৌসুমে এ বিলের প্রায় ছয় শ একর জমিতে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। বাঁধ নির্মাণের ফলে বিলের মধ্যে প্রায় সারা বছর ৮-১০ ফুট পানি জমে থাকবে। এতে ধান চাষ ব্যাহত হবে। ফলে বিলপাড়ের প্রায় ১৫-২০ হাজারের বেশি মানুষকে অনাহারে মরতে হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, আশুড়ার বিলসংলগ্ন জমিগুলো সরকারের। এত দিন লোকজন জমিগুলো ভোগদখল করে আসছিলেন। বাঁধ নির্মাণ করার ফলে বিলে মাছের চাষসহ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে সরকার। এর উপকারভোগী হবেন এলাকার বাসিন্দারাই। তাঁদের একাধিকবার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।