আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আমলের শুনানি ২১ জানুয়ারি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আমলের শুনানির জন্য ২১ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন আদালত। সেদিন এই মামলার গ্রেপ্তার সব আসামিকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে।
আজ বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস এই দিন ঠিক করেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল।
তাপস কুমার পাল জানান, ১৩ জানুয়ারি বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার নথিপত্র বিচারের জন্য ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। আদালত এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আমলের বিষয়ে শুনানির জন্য ২১ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন। সেদিন এই মামলার গ্রেপ্তার সব আসামিকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় পলাতক চার আসামির একজন গত রোববার ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই আসামির নাম মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম।
৫ জানুয়ারি বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার চার পলাতক আসামির নামে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের নির্দেশ দেন আদালত। সেদিন পলাতক চার আসামির সম্পদ ক্রোকসংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ঠিক ছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়। তাঁদের নিজেদের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নেই বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় পলাতক চার আসামির সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। একই সঙ্গে সেদিন তাঁদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারির আদেশ দেওয়া হয়।
এই মামলায় পলাতক তিন আসামি হলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় গত ১৩ নভেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ক্রিকেট স্টাম্প, মোটা দড়ি দিয়ে নির্যাতন করার একপর্যায়ে আবরার ফাহাদ বমি ও প্রস্রাব করে ফেলেন। এরপর তাঁকে হলের বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। বদলানো হয় তাঁর জামাকাপড়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ছাত্রশিবির করার ‘তথ্যের’ ভিত্তিতে আবরারকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, আবরার ফাহাদকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেওয়ার পর ইফতি মোশাররফ অন্যদের বলেন, ‘তোরা এবার আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের কর। বুয়েটে কে কে শিবির করে।’ তখন মোয়াজ আবু হোরায়রা ও অমর্ত্য ইসলাম আবরারের মুমূর্ষু অবস্থা দেখে মেহেদি হাসান রবিনকে বলেন, ‘আবরারকে হাসপাতালে নিতে হবে।’ এই কথা শোনার পর মেহেদি হাসান রবিন বলেন, ‘ও নাটক করছে। শিবির চেনস না। শিবির চেনা কষ্ট।’ রাত আড়াইটার সময় ইফতি মোশাররফ, মুজাহিদ, তাবাখখারুল ও তোহা মিলে আবরারকে তোশকে করে হলের দোতলার সিঁড়িতে রাখেন।
এরপর আসামিরা বুয়েটের চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন। চিকিৎসক আবরারের দেহ পরীক্ষা করে ঘোষণা দেন তিনি মারা গেছেন। আবরারকে হত্যার পর ক্রিকেট স্টাম্প, তোশক, বালিশ, আবরারের ল্যাপটপ, চাপাতি হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদের কক্ষে রাখা হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ওই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে অপরাধ ঘটাতে সার্বিক সহায়তা করেন। আবরারের মৃতদেহ হলের নিচে নামানোর পর তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল বুয়েটের চিকিৎসকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে পরস্পরের সহায়তায় ছাত্রশিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।
অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়। ২১ জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম আবরারের বাবার করা হত্যা মামলার এজাহারে আছে। তাঁরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা ও এ এস এম নাজমুস সাদাত। বাকি পাঁচজনের নাম তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তাঁরা হলেন ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু।