প্রতি নির্বাচনে প্রতারণার নতুন পদ্ধতি বের হচ্ছে: শাহদীন মালিক

স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন নামের একটি সংগঠন ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বব্যাপী ইভিএম প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে শাহদীন মালিকসহ অনেকে বক্তব্য দেন। ছবি: দীপু মালাকার
স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন নামের একটি সংগঠন ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বব্যাপী ইভিএম প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে শাহদীন মালিকসহ অনেকে বক্তব্য দেন। ছবি: দীপু মালাকার

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনগুলো প্রতিটি নির্বাচনে প্রতারণার নতুন নতুন পদ্ধতি বের করে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন ছাড়া ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ কেউ চাইছে না বলেও তিনি দাবি করেন।

আজ বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক গোলটেবিল বৈঠকে শাহদীন মালিক এসব কথা বলেন। স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন নামের একটি সংগঠন ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বব্যাপী ইভিএম প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এ বৈঠকের আয়োজন করে।

শাহদীন মালিক বলেন, ‘ইদানীং নির্বাচন কমিশনগুলো ও সরকার ভালো। প্রতি নির্বাচনে আমাদের প্রতারণা করার জন্য তারা নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে। ২০১৪ সালে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। ২০১৮ সালে তো তা পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। তখন তারা আগের দিন ভোট করে ফেলল। এবার সিটি নির্বাচনে যদি ভোররাতে ভোট দেওয়া শুরু হয়ে যায়, সাংবাদিকেরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ধরে ফেলবে। তাই এবার তাদের নতুন পন্থা উদ্ভাবন করতে হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, এবারের প্রতারণা কীভাবে হবে, তা এই নির্বাচন হয়ে গেলে বোঝা যাবে। তখন পরের নির্বাচনে প্রতারণার নতুন পদ্ধতি বের করা হবে।

৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। এ বিষয়ে শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকার ছাড়া ইভিএম বেশির ভাগ লোক চাইছে না। এবারের নির্বাচনকে কোটিপতিদের নির্বাচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চার প্রার্থীই কোটিপতি। এখনকার গণতন্ত্র হচ্ছে কোটিপতির গণতন্ত্র। কোটিপতিরা বাংলাদেশে সৎ পথে টাকা আয় করে না। এটা কোটিপতিদের নির্বাচন। তাদের জন্য গরিব–দুঃখীদের দুঃখ–দুর্দশার কথা বলা সহজ। কারণ দুঃখ–দুর্দশা তাদের গায়ে লাগে না। আমরা একটা কোটিপতিদের প্রতারণামূলক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম গোলটেবিলে এক লিখিত বক্তব্য ইভিএম ব্যবহারের বিভিন্ন সমস্যার দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইভিএমে যে ডেটা দেওয়া থাকবে, তা আগে থেকেই প্রভাবিত করা যায়। মধ্যরাতের নির্বাচন যারা করে, তারা সফটওয়্যারও পরিবর্তন করে নিতে পারে। আঙুলের ছাপ কাজ না করা, ভাইরাস ঢুকে যাওয়া, হ্যাক হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া এ পদ্ধতি স্বচ্ছ না। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মানুষ যন্ত্রকে যেভাবে কমান্ড করে, যন্ত্র সেভাবে চলবে। ইভিএমেও নির্বাচন কমিশন নিজেদের মতো করে কমান্ড দিয়ে রাখবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা ছাড়াই শুধু মেশিন দিয়ে সমস্ত চুরি করা হবে। তিনি এর বিরুদ্ধে সবাইকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

ইভিএমে যারা আগ্রহী, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ উল্লেখ করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, শিক্ষিত সমাজ ইভিএম প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে রেজা কিবরিয়া বলেন, এই কমিশন সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষের ভালো ধারণা নেই। তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট চুরিটা সুন্দরভাবে করা যায়। দেশের মানুষ ভোট চুরির নতুন পদ্ধতি প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী নিজে ইভিএম পদ্ধতির একজন শিকার জানিয়ে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে তাঁর আসন ঢাকা-৬ এ ইভিএমের মাধ্যমে ভোট চুরি করা হয়েছিল। সরকারকে ডিজিটাল চোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, চুরিটা তারা ভালো রপ্ত করেছে।

স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাহাউদ্দিন সামাদ, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।