নদীর তলদেশে পলিথিনের পুরু স্তর

ময়লা-আবর্জনা-পলিথিনে দূষিত হচ্ছে কীর্তনখোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদী। ছবি: সাইয়ান
ময়লা-আবর্জনা-পলিথিনে দূষিত হচ্ছে কীর্তনখোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদী। ছবি: সাইয়ান

পলিথিন-প্লাস্টিক ও অপচনশীল বর্জ্য অবাধে ফেলা হচ্ছে বরিশালের কীর্তনখোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীতে। এতে পানিদূষণের পাশাপাশি নদীর পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে আগেই। এখন নতুন বিপদ শুরু হয়েছে কীর্তনখোলা খনন করতে গিয়ে। নদীর তলদেশে পলিথিনের এতটাই পুরু স্তর পড়েছে যে খননকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।

৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কীর্তনখোলা দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। পাশাপাশি এই অঞ্চলের কৃষিকাজ ও মানুষের জীবন-জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই নদী। এই নদীর বড় অংশ বরিশাল নগরের আশপাশে।

এলাকাবাসী ও কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলের দেশ চীন, ভারত ও নেপালে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এসব বর্জ্য পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর বড় অংশ সাগরে চলে যায়। কিছু অংশ নদ-নদীতে থেকে যায়। এর বাইরে বাংলাদেশের ভেতরে উৎপাদিত বর্জ্যও বিপুল পরিমাণে নদ-নদীতে মিশে যাচ্ছে। প্রতিদিন পলিথিন, প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্য কীর্তনখোলা নদীতে ফেলা হচ্ছে। বরিশাল নগরের বর্জ্যযুক্ত পানি নগরের বিভিন্ন খাল হয়ে কীর্তনখোলা নদীতে গিয়ে পড়ছে। নদীর তীরে বা চরে নানা মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য, যা জোয়ারের সময় পানিতে মিশে যাচ্ছে। আবার দেশের অন্যতম নদীবন্দর বরিশালে অবস্থিত। নদীবন্দর দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার পথে প্রতিদিন ছোট-বড় অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। এসব লঞ্চ থেকে বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। বরিশাল নদীবন্দর এলাকা ঘিরে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি। বাড়ছে ভাসমান ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। ফলে পন্টুনসংলগ্ন এলাকায় নদীতে দূষণ সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল লঞ্চঘাট, নগরের ভাটারখাল, ডিসিঘাটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে নদীর চরে বিপুল পরিমাণে পলিথিন, প্লাস্টিক ও অপচনশীল বর্জ্যের স্তূপ। জোয়ারের সময় সহজেই এসব বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে। নৌবন্দরে আসা যাত্রী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অবলীলায় পলিথিন ও পানির বোতল, প্লাস্টিকের সামগ্রী সরাসরি নদীতে ফেলছেন। এ ছাড়া যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো ঘাটে নোঙরের পর আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে ফেলা হচ্ছে নদীতে।

>নতুন বিপদ শুরু হয়েছে। নদীর তলদেশে পলিথিনের এতটাই পুরু স্তর পড়েছে যে খননকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।

বরিশাল নদীবন্দরের কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার বলেন, ‘আমরা এর আগে লঞ্চ কোম্পানিগুলোকে নদীতে ময়লা না ফেলার জন্য চিঠি দিয়েছি। তাদের যেমন ডাস্টবিন ব্যবহার করতে বলেছি, তেমনি নদীবন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ দিকে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেছি। যেখান থেকে সিটি করপোরেশন ময়লা নিয়ে যায়। তবে এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি লঞ্চ বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রাখার ব্যবস্থা করেছে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) খনন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নদীবন্দরসংলগ্ন এলাকায় নাব্যতা-সংকট রয়েছে। তাই নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি সেখানে খননকাজের প্রকল্প নেওয়া হয়। গত ১ নভেম্বর থেকে খনন কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর নদীতে পলিথিন-প্লাস্টিকের বর্জ্যের এমন ভয়াবহ অবস্থার বিষয়টি নজরে আসে। 

বিআইডব্লিউটিএর খনন বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, একটি খননযন্ত্র স্বাভাবিকভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০-১২ ঘণ্টা খনন কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। বরিশাল নদীবন্দর এলাকায় আগে আমরা সর্বোচ্চ ১১ ঘণ্টা একনাগাড়ে খনন করেছি। কিন্তু সম্প্রতি খনন করতে গিয়ে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি কাজ চালানো সম্ভব হয়নি। কারণ, খননযন্ত্রের কাটারে বারবার পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী আটকে যাচ্ছে। নদীবন্দরের পন্টুনসংলগ্ন এলাকায় খনন করতে গিয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, নদীতে পলিথিন, প্লাস্টিকসহ ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য লঞ্চ কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই নির্দেশ মানছে না।