শারমিনের মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা, এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ

রুবাইয়াত শারমিন
রুবাইয়াত শারমিন

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি হত্যা, না আত্মহত্যা, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার রুবাইয়াতের বন্ধু আবদুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও পুলিশ এখনো কোনো প্রমাণ পায়নি। গত ৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে। তবে শারমিনের পরিবার মনে করে, আবদুর রহমানের কারণেই ঘটনাটি ঘটেছে।

গত ৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তরুণী শারমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন রাতে স্বজনেরা রমনা থানায় লাশের ছবি দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন। সিদ্ধেশ্বরীর যেখান থেকে শারমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়, সেখানে পাশাপাশি তিনটি ভবনের একটি ১২ তলা (আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স)। এর চারতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক (দোকান, বিভিন্ন অফিস) কার্যক্রম চলে। পঞ্চম তলা থেকে আবাসিক ফ্ল্যাট। পুলিশের ধারণা, আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ছাদ থেকে শারমিনকে কেউ ফেলে দিয়েছে, অথবা তিনি সেখান থেকে পড়ে গেছেন।

শারমিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে ইংরেজিতে স্নাতক করছিলেন। তাঁর বাবা রোকন উদ্দিন হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক।

শারমিনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না পরিবার। তাঁর মা নাহিদা আক্তারের বিশ্বাস, শারমিন আত্মহত্যা করতে পারেন না। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে আবদুর রহমান জড়িত। নাহিদা আক্তার গত ৫ জানুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার (লাশ উদ্ধার) ঠিক আগে আগে তাঁর মেয়ে দুটি বাসায় টিউশনি করিয়েছেন। বাসায় ব্যাগ রেখে হাসিখুশিভাবে বেরিয়েছেন। নিজে নিজেই যদি মারা যেতেন, তাহলে সবকিছু এত স্বাভাবিকভাবে করে যেতে পারতেন না। 

>রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে গত ৪ ডিসেম্বর রাতে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে তরুণী শারমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

শারমিনের বন্ধু আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আবদুর রহমান স্বীকার করেননি। তদন্ত চলছে। এখনো মন্তব্য করার মতো কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, শারমিনের সঙ্গে ২০১৮ সালের শুরুতে স্টামফোর্ডে পড়ার সময় তাঁর সম্পর্ক ছিল। পরে তাঁর বাবা ও চাচার মৃত্যুর পর তিনি সেই সম্পর্ক থেকে সরে আসেন। এরই মধ্যে স্টামফোর্ড ছেড়ে তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্টে পড়া শুরু করেন। ঘটনার দিন এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্টামফোর্ডের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে গেলে সেখানে শারমিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তখন শারমিন সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি রাজি না হয়ে চলে আসেন। পরে বন্ধুদের মাধ্যমে শারমিনের লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি জানতে পারেন।

আবদুর রহমানের সিপাহীবাগের বাসায় তাঁর মা বিবি রাবেয়ার সঙ্গে ৬ জানুয়ারি কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, শারমিনের সঙ্গে তাঁর ছেলের সম্পর্কের বিষয়ে কিছু জানতেন না। ঘটনার পর ছেলের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। তাঁর দাবি, যেদিন শারমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়, সেদিন বিকেল থেকেই তাঁর ছেলে বাসায় ছিলেন। পরদিন ভোরে উঠে তিনি কলেজে যান।

আবদুর রহমানকে ডিবি ৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার দেখায়। বিবি রাবেয়া বলছেন, ৬ ডিসেম্বর সকালে তাঁর ছেলেকে ফোন করে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ফোনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে। আবদুর রহমান একাই সেখানে যান। এরপর তাঁকে আর ছাড়া হয়নি।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ৪ ডিসেম্বর আবদুর রহমানের সঙ্গে দেখা করার পর শারমিন সিদ্ধেশ্বরীর আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সে তাঁর এক বান্ধবীর কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অনেক কান্নাকাটি করেছেন। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। টিউশনি করতে যে বাসায় গিয়েছিলেন, তাঁরাও তাঁকে অন্য দিনের চেয়ে কম উৎফুল্ল দেখেছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, আবদুর রহমান সম্পর্ক ছেদ করে শারমিনকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন।