মহাসড়কে লাশের টুকরো: তিন দিনেও ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ

নাসির উল্লাহ
নাসির উল্লাহ

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নাওতলা এলাকায় চা–দোকানদার নাসির উল্লাহ (২৮) হত্যার কোনো ক্লু তিন দিনেও খুঁজে পায়নি পুলিশ। পাশের দোকান থেকে উদ্ধার হওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও কুয়াশার কারণে কিছু দেখা যাচ্ছে না।

গত রোববার রাতের কোনো এক সময়ে নাসিরকে কুপিয়ে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে লাশ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। সোমবার সকালে মহাসড়কের অন্তত দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে ছড়ানো-ছিটানো ওই লাশের টুকরোর অংশবিশেষ উদ্ধার করে পুলিশ ও এলাকাবাসী।

নাসিরের স্ত্রী ফারহানা আক্তারের দাবি, শত্রুতা ছাড়া কেউ এভাবে হত্যা করে না। আর পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে। তদন্তেই বেরিয়ে আসবে বীভত্স–নৃশংস ওই খুনের ঘটনা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের নাওতলা পুকুরের পাড়ে টঙের চা–দোকান। ওই দোকানেই খুন হন নাসির উল্লাহ। ছোট্ট দোকানটি এখন বন্ধ। দোকানের পেছনে পূর্ব পাড়ে পুকুর। দোকানের সামনে যানবাহন রাখার খালি জায়গা। এর পশ্চিমে মহাসড়ক–লাগোয়া আরেকটি পুকুর। মাঠের দক্ষিণে রড–সিমেন্টের দোকান মুক্তি ট্রেডার্স। ওই দোকানের পেছনে ঘনবসতি এলাকায় নাসিরের বাড়ি।

ঘরের সামনে কথা হয় নাসির উল্লাহর স্ত্রী ফারজানা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শত্রু ছাড়া কেউ এভাবে হত্যা করে না। ওর কোনো চিহ্ন না রাখার জন্য মহাসড়কে লাশ টুকরো করে ফেলে দেওয়া হয়। কোনো ফিঙারও খুঁজে পাওয়া যায়নি। হত্যার পর লাশ গুম করার জন্যই টুকরো করে মহাসড়কে ফেলা হয়। যাতে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া না যায়। আমি এর বিচার চাই।’

ফারজানা আক্তার তাঁর কোলে থাকা ১৬ মাস বয়সী মেয়ে নুসরাত জাহানকে দেখিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘এই শিশুর ভবিষ্যৎ কী? কে আমাদের খাওয়াবে? ২০১৭ সালের ২৫ মে আমার বিয়ে হয়। নাসির এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। এমন ভালো ছেলেকে কে তলেতলে হত্যার পরিকল্পনা করে হত্যা করল। আমরা কেউ এমন লাশ দেখতেও যাইনি।’

নাসির উল্লাহর মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘পুতের চেহারা পাইছি না। সারা বিশ্বে এমন ঘটনা আর কয়টা আছে।’ নাসির উল্লাহর বাবা রবিউল্লাহ বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে নাসির উল্লাহ সবার বড়। সে মারতি গাড়ি চালাত। দোকানদারিও করত। গত রোববার রাত আটটায় ঘর থেকে ভাত খেয়ে বেরিয়ে যায় দোকানে। পরের দিন ভোরে গিয়ে দেখি দোকানের ভেতরে কম্বলে, বেড়ায় ও পিঠার পাতিলে রক্তের ছোপ। এখন কে টানবে পরিবারটি।’

এদিকে দুপুরে নাসিরের দোকানের কাছাকাছি রড–সিমেন্টের দোকানি নাজমুল হাসান বলেন, ‘পুলিশ আমাদের দোকানে থাকা সিসি ক্যামেরা নিয়ে গেছে। শুনেছি, কুয়াশার কারণে এতে কিছু দেখা যায় না। নাসির উল্লাহর এলাকায় কোনো শত্রু ছিল না। এরপরও কেন এমনটা হলো বলতে পারছি না।’

নাওতলা এলাকার অন্তত ১০ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদকসেবীরা দোকানে খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ওই খুন হতে পারে। অথবা টং দোকান উচ্ছেদ ও গাড়ির অন্য চালকদের সঙ্গে বিরোধ নিয়েও হতে পারে।

চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল ফয়সল বলেন, ‘আমরা কোনো ক্লু খুঁজে পাইনি। তদন্ত চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কুয়াশার কারণে কিছু দেখা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা চান্দিনা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।’

আরও পড়ুন