মোবাইল ফোনের জন্যই হত্যা করা হয় ইসমাইলকে

২২ হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল ফোনসেটের কারণেই প্রাণ হারাতে হয়েছে হবিগঞ্জের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন (১২)কে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৫ বছরের কিশোর আজ বুধবার হবিগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। হবিগঞ্জ পুলিশ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে।

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা-পুলিশ গত সোমবার সকালে সদর উপজেলার দক্ষিণ চরহামুয়া এলাকায় খোয়াই নদী থেকে ইসমাইল হোসেন (১২) নামের এক কিশোরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। সে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর তেঘরিয়া গ্রামের সৌদিপ্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে। ইসমাইল তেঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ঘটনার দুই দিন আগে থেকে সে নিখোঁজ ছিল। ইসমাইলের মা শাহেনা বেগম গত রোববার ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।


পুলিশ ওই দিন রাতেই ১৫ বছরের এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। সে দশম শ্রেণির ছাত্র।

হবিগঞ্জ সদর সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া কিশোরকে গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল হুদার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রায় এক মাস আগে ইসমাইলের হাতে একটি মোবাইল সেট দেখে এই কিশোরের লোভ হয়। তাই সে ইসমাইলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। ১০ জানুয়ারি বিকেল সে ইসমাইলকে শহরের পোদ্দরবাড়ি এলাকায় নাটক দেখার প্রস্তাব দেয়,সঙ্গে মোবাইল সেটটি নিতেও বলে। এতে রাজি হয় ইসমাইল। ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে ইসমাইলকে নিয়ে এ কিশোর সদর উপজেলার চরহামুয়া নোয়াবাদ খোয়াই নদীর পাড়ে যায়। সেখানে নদীর চড়ে সবজি ও শস্যখেত দেখে অভিযুক্ত কিশোর ইসমাইলকে ছবি তুলতে বলে। পাশাপাশি ভিডিও করে নাটকটি ইউটিউবে প্রচার হলে এবং ১০০টি লাইক পেলে ৫০ হাজার টাকা পাবে বলে প্রলোভন দেখায়। এরপর নাটকের চরিত্র অনুযায়ী ইসমাইলের হাত-পা বাঁধা হয়। একপর্যায়ে নদীর পাড়ে থাকা একটি বাঁশের মোড়া দিয়ে কিশোরটি ইসমাইলের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। ইসমাইলের মৃত্যু নিশ্চিত হলে লাশটি খোয়াই নদীর পানিতে ফেলে দিয়ে মোবাইলটি নিয়ে সে চলে যায়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম আরও জানান, ইসমাইলকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ভিকটিমের মোবাইল সেটটি উদ্ধারের চেষ্টা করছে। হত্যাকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিলেও তার বিচার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হবে। অভিযুক্ত কিশোরকে জবানবন্দি শেষে গতকাল রাতেই হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।