রাষ্ট্রপতির ঐকমত্যের আহ্বান প্রহসন: রুমিন

রুমিন ফারহানা
রুমিন ফারহানা

জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাকে প্রহসন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন এ কথা বলেন।

রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, বিএনপির এক লাখ কর্মীর নামে মামলা দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে জাতিকে বিভাজন করে, ভিন্নমত দমন করে রাষ্ট্রপতির জাতীয় ঐকমত্যের ডাক জাতির সঙ্গে প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের বিভিন্ন দিকের সমালোচনা করেন রুমিন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছে। এর আগের বছরও রাষ্ট্রপতি একই বক্তব্য দেন। সম্ভবত রাষ্ট্রপতি আগামী বছরও একই কথা বলবেন। কারণ যে কথা মানুষ নিজে বিশ্বাস করে না, কিন্তু অন্যকে বিশ্বাস করাতে চায় তা বারবার বলে।

রুমিন বলেন, সুজন, টিআইবি, বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিদেশি গণমাধ্যম, আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনের তীব্র সমালোচনা করেছে। এই নির্বাচনের ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্যতা আছে বলে কেউ মনে করে না। এই নির্বাচন বিশ্বের বুকে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিভিন্ন দেশে নানা কারচুপি হয়েছে। কিন্তু আগের রাতে ভোট দিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের নজির নেই।

বিএনপির এই সাংসদ বলেন, চরম অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে বলে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু গত এক বছরে অর্থনীতির সামষ্টিক সূচকগুলো ক্রমাগত খারাপ হতে হতে এখন বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা একটা মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছেন। গত এক দশকে গত বছর প্রথম রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে কমেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতি খারাপ। শেয়ার বাজার ধসে পড়েছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আর শেয়ার বাজার ধ্বংস এটা সমর্থক উল্লেখ করে রুমিন বলেন, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের পর এখন আবার শেয়ার বাজার ধসে পড়েছে। শেয়ার বাজার সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো। লাখ লাখ মানুষকে পথে বসানো হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।

বিএনপির এই সাংসদ বলেন, আওয়ামী লীগ আর দুর্নীতি সমার্থক। সাম্প্রতিক তথাকথিত শুদ্ধি অভিযানে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের তৃতীয় চতুর্থ সারির নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। কোটি কোটি টাকার বান্ডিল পাওয়া গেছে। এর থেকে বোঝা যায় ওপরের সারির নেতাদের কী অবস্থা।

বাক্‌স্বাধীনতা হুমকির মুখে বলে দাবি করেন রুমিন। তিনি বলেন, বিজ্ঞাপনদাতাদের চাপ দিয়ে গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়ে মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলতে পারছে না।

রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেন, আইন ও বিচার ব্যবস্থা চলে সরকারের মর্জি মতো। খালাস এবং দণ্ড হয় সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী। ফেসবুকে ভাইরাল হলে এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলে এবং অভিযুক্ত প্রভাবশালী না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারের ইচ্ছামতো চলে বলেই খালেদা জিয়া জামিন পান না। তবে বিচার বিভাগ নিয়ে তাঁর বক্তব্য স্পিকারের আসনে থাকা ফজলে রাব্বী মিয়া এক্সপাঞ্জ করে দেন।

ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সুযোগ্য প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস। সুযোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে ভুল করলে ২০০৪ সালের মতো দুর্নীতির কারণে পিছিয়ে পড়তে হবে। নগরবাসী যেন তা না করে সে আহ্বান জানান তিনি।

অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের আ ফ ম রুহুল হক, এনামুল হক, আব্দুস সোবহান, বেনজির আহমেদ, জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি প্রমুখ ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।