ফিলিং স্টেশনের শৌচাগারগুলো নোংরা, ব্যবহারের অনুপযোগী

নারীর জন্য আলাদা শৌচাগার থাকলেও  তা থাকে তালাবদ্ধ। মঙ্গলবার বিকেলে মৎস্য ভবনের রমনা পেট্রল পাম্প অ্যান্ড  সার্ভিস সেন্টারে।  ছবি: প্রথম আলো
নারীর জন্য আলাদা শৌচাগার থাকলেও তা থাকে তালাবদ্ধ। মঙ্গলবার বিকেলে মৎস্য ভবনের রমনা পেট্রল পাম্প অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টারে।  ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর ফিলিং স্টেশনের (পেট্রোল ও সিএনজি স্টেশন) শৌচাগারগুলো অধিকাংশই নোংরা। রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে এগুলোর কোনো কোনোটি ব্যবহারের অনুপযোগী। বেশির ভাগ শৌচাগারে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। সাধারণ মানুষ চায়, এসব শৌচাগার ব্যবহারের অবারিত সুযোগ। তবে পাম্পমালিকেরা নিরাপত্তার কথা তুলে জনসাধারণের এ প্রয়োজন মেটাতে নারাজ।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের অন্তত পাঁচটি ফিলিং স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, চারটির শৌচাগারের পরিবেশ খুব নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী। কয়েকটি ফিলিং স্টেশনের শৌচাগার ছিল তালাবদ্ধ। তবে এখানে কর্মরত শ্রমিক–কর্মচারীদের ব্যবহৃত শৌচাগারগুলো খোলা ছিল। এসব শৌচাগার ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ লোকজন, বিশেষ করে নারীরা। প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের তো কোনো সুযোগই নেই।

মৎস্য ভবন এলাকায় অবস্থিত রমনা ‘পেট্রলপাম্প অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টার’। ১৯৫০ সাল থেকে চলা এই ফিলিং স্টেশনে মোট পাঁচটি শৌচাগার রয়েছে। এর মধ্যে নারীদের শৌচাগারে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সাধারণের জন্য বরাদ্দকৃত শৌচাগারটির দরজা খুলতেই উৎকট গন্ধ নাকে এসে লাগল। ভেতরে দেখা গেল, সেখানে কোনো সাবান নেই। তবে একটি বদনা আছে। মেঝেজুড়ে কমোডের নোংরা পানি ও মানববর্জ্য উপচে শৌচাগারটি ভেসে গেছে।

১৪ জানুয়ারি বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এই ফিলিং স্টেশনে তেল নিতে আসেন রাইড শেয়ারিং বাইকচালক মো. নাজমুল হক। তিনি সাধারণ শৌচাগারটির দরজা খুলেই দুবার ‘ওয়াক থু’ বলে দ্রুত সরে গেলেন। শৌচাগার ব্যবহার করতে না পেরে রাগে গজ গজ করে বললেন, ‘টয়লেটের এ অবস্থা থাকলে মানুষ কেমনে চলবে। আশপাশে তো কোনো পাবলিক টয়লেটই নাই। নোংরা টয়লেট দিনে একবার পরিষ্কার করলে কত টাকা খরচ হয়। এই শৌচাগারগুলো সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকা দরকার। সে ক্ষেত্রে ব্যবহরের জন্য তারা একটা খরচ নিতে পারে।’

শৌচাগারের বিষয়ে জানতে চাইলে পাম্পমালিক মো. নাজমুল হকের দাবি, তাঁরা প্রতিদিন একবার করে প্রতিটি শৌচাগার পরিষ্কার করেন। এর জন্য একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে তাঁরা দায়িত্ব দিয়েছেন।

মৎস্য ভবন থেকে এগিয়ে বাংলামোটরের পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুরুষ ও নারীদের আলাদা দুটি শৌচাগার রয়েছে। তবে কোনোটিতেই আলোর ব্যবস্থা নেই। পুরুষদের শৌচাগারে কোনো সাবান বা টিস্যু পাওয়া গেল না। স্যাঁতসেঁতে শৌচাগারটির মেঝেজুড়ে ছিল বালু–পানি মিশ্রিত কাদা।

পদ্মা অয়েল পাম্পের লাগোয়া মেঘনা মডেল অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টার। এখানে মোট চারটি শৌচাগারের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। এর মধ্যে একটিতে ঢুকতেই দেখা যায়, শৌচাগারটি অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার। দুর্গন্ধ এড়াতে ভেতরে চারপাশে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো রয়েছে। সেখানে সাবান ও টিস্যুও রাখা ব্যবস্থাও আছে। তবে এটি ব্যবহার করতে হলে জনপ্রতি পাঁচ টাকা করে দিতে হয়। 

তেজগাঁওয়ের ট্রাস্ট ফিলিং স্টেশনে চারটি শৌচাগার আছে। এর মধ্যে দুটি নারীদের জন্য। শৌচাগারগুলোতে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, প্রতিটির অবস্থা স্যাঁতসেঁতে ও অপরিচ্ছন্ন।

বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সিএনজি পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংখ্যা ১০০টি ও পেট্রল ফিলিং স্টেশন ১০৮টি। এ ছাড়া সারা দেশে পেট্রোল স্টেশন প্রায় ৪ হাজার ৬০০টি। 

পাম্পমালিকেরা বলছেন, তাঁরা সর্বসাধারণের জন্য পাম্পের শৌচাগারগুলো ব্যবহার করতে দিতে চান না। কারণ, এতে করে তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়বে। তবে সরকার এসব ফিলিং স্টেশনের শৌচাগারগুলোকে সবার ব্যবহার (পাবলিক টয়লেট) করার কথা ভাবছে। এমন সিদ্ধান্ত তাঁদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ফিলিং স্টেশনের মালিক বলেন, ‘পাম্পের শৌচাগারগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকবে। পাম্পে প্রতিদিন প্রচুর টাকার তেল বিক্রি হয়। শৌচাগার ব্যবহারের অজুহাতে কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে সহজেই।’

বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশের মহাসচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শৌচাগারগুলো সর্বসাধারণের জন্য করা হলে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে। অনেকে শৌচাগারে না বুঝেই সিগারেট, দেশলাই নিয়ে ঢোকেন। আমরা বাধা দিতে পারি না।’